প্রাণে পরিপূর্ণ আল্লাহর বিশ্বজগৎ
রাব্বি এ্যালেন এস মুলার; আবরার শেখ
Published: 2021-11-12 18:40:00 BdST | Updated: 2024-05-14 15:37:14 BdST
মধ্য যুগে সকল খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিকরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে গ্রীকদের মধ্যে প্রচলিত টলেমীর ভূকেন্দ্রিক মতবাদকে সার্বজনীন সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ক্যাথলিক গির্জা গ্যালিলিও এর মত যারা ভিন্ন চিন্তা প্রকাশের চেষ্টা করত তাদেরকে শাস্তি প্রদান করত।
আমি সঠিকভাবে জানি না তারা কেন বিশ্বাস করত যে মহাবিশ্বে প্রাণের বিরলতা প্রমাণ করে যে আল্লাহ এই গ্রহেই শুধুমাত্র প্রাণ সৃষ্টি করেছে। সম্ভবত তারা বিশ্বাস করত যদি অন্য কোন গ্রহে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কোন প্রাণের অস্তিত্ব থাকে তাহলে তারা আল্লহর বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত মানবজাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
যদিও আমার কাছে তার বিপরীতটাই সত্য। আল্লাহর সৃষ্ট মহাবিশ্ব প্রাণে পরিপূর্ণ যা শুধুমাত্র সকল সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর রহমত ও ভালবাসা।
আল কোরআন ও হিব্রু বাইবেল উভয় শিক্ষা দেয় আল্লাহ সমগ্র মহাবিশ্বকে সার্বজনীনভাবে প্রাণের বিকাশের সহায়ক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
আল কোরআন বলেছে,
“আমি তোমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।” ( সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ১০৭)।
অনেক মন্তব্যকারী এটাকে নিয়ে বলেছেন আল্লাহ ১৮০০ বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। আমাদের পৃথিবী তাদের মধ্যে একটি মাত্র।
( মিরাত-ই-কাইনাত, ভলিউম-০১, পৃষ্ঠা-৭৭)।
হিব্রু বাইবেলে বলা হয়েছে, বনী ইসরাইলের বাদশাহ নবী দাউদ (আ.) এর যবুর কিতাবে বলা হয়েছে,
“তোমার রাজ্য যা সকল বিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত; এবং তোমার কতৃত্ব সকল প্রজন্মের জন্য।”(স্লামস ১৪৫:১৩ )
২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হিসাব করেছেন যে শুধুমাত্র আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়েতে পৃথিবীর মত আয়তনের প্রায় ১৭০০ কোটি গ্রহ আছে। তারা আরও বলেছে প্রতি ছয়টি তারার একটির কক্ষ পথে পৃথিবীর ন্যায় আয়তনের একটি গ্রহ আছে।
দুই বছর পরে নতুন দুটি গবেষণা থেকে অতিরিক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যা আমাদের সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীর মত গ্রহ সহ অনেক সৌরজগতের অস্তিত্বের সন্ধান দিচ্ছে। এই তথ্যগুলো আল্লাহর সৃষ্টি মহাবিশ্ব যে প্রাণে পরিপূর্ণ তার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।
প্রথমত, জানুয়ারীতে আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানী সমাজ (এএএস) এর একটি সভায় নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ দল ঘোষণা দেয় যে, তারা আমাদের সৌরজগতের বাইরে ১০০০ তম গ্রহের সন্ধান পেয়েছে।
এটির মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরে মোট গ্রহের সংখ্যা ১৭৯৫ তে দাঁড়াল। এছাড়া আরও ৪০০০ গ্রহ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে যা কেপলার টেলিস্কোপ দ্বারা তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ বছর আগে আমাদের সৌরজগত সাধারণতা সম্পর্কে কোন প্রমাণ ছিল না। এখন আমরা জানি আমরা হাজার গ্রহের মধ্যে একটি গ্রহতে বসবাস করছি।
আমরা কি একা না অনন্য ?
দ্বিতীয়ত, কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে একটি তারা আবিস্কার করা হয়েছে যার কক্ষ পথে পৃথিবীর চেয়ে সামান্য আয়তনে বড় তিনটি গ্রহ আছে। সবচেয়ে বাইরের গ্রহটি যা পৃথিবীর চেয়ে ৫০% বড় উপরিভাগের তাপমাত্রা তরল পানি ও প্রাণের অস্তিত্বের জন্য সহায়ক।
এটা প্রমাণ করে যে আল্লাহর সৃষ্টি মহাবিশ্ব যে প্রাণে পরিপূর্ণ তা আক্ষরিকভাবে খুবই কাছে চলে আসছে।
আবিষ্কৃত তারাটি শীতল লাল এম-বামন শ্রেনীর, যার ভর ও আয়তন আমাদের সূর্যের অর্ধেক। আমাদের ছায়াপথের তিন- চতুর্থাংশ গ্রহ এম-বামন শ্রেনীর।
এম-বামন তাদের জ্বালানী গুলো বড় তারাদের চেয়ে ধীরে জ্বালায় এবং এইভাবে উপযুক্ত পরিবেশ সহ যে কোন গ্রহে জীবনের বিকাশে বেশী সময় দেয়।
১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থানরত তারাটি পৃথিবীর নিকটে অবস্থানরত শীর্ষ ১০টি তারার একটি। তারাটির নৈকট্য এর কারণে এটি যথেষ্ট উজ্জ্বল যার ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা খুব সহজে গ্রহ তিনটির আবহাওয়া সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে এবং গ্রহ গুলোর আবহাওয়া পৃথিবীর মত কি না ও বহুকোষী প্রানীর জন্য সহায়ক হবে কি না এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
যারা সকল বিশ্বের এক স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য এই দুইটি গবেষণা কোন আকস্মিক আঘাত নয়।
রোমান ক্যাথলিক ‘ইনকুইজেশন’ দ্বারা গ্যালিলিও অভিযুক্ত হলেও কোন মুসলমান অথবা কোন ইহুদী জ্যোতির্বিজ্ঞানী মুসলমান অথবা ইহুদী ‘ইনকুইজেশন’ দ্বারা অভিযুক্ত হয় নি। কারণ, মুসলমান বা ইহুদীদের এরূপ কোনো ধর্মীয় সভা বা প্রতিষ্ঠান ছিল না।
এছাড়া মুসলমান ও ইহুদীদের মধ্য থেকে অনেকে দার্শনিক ছিল যারা এরিস্টটল ও টলেমীর সমালোচক ছিল। অধিকাংশ মধ্যযুগীয় মুসলমান ও ইহুদী ধর্মীয় নেতারা গ্রীক বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষযুক্ত এমন কোন বিজ্ঞানের নতুন চিন্তাকে বাধা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।
সুতরাং নতুন নতুন আবিস্কার সর্বদা আল্লাহর সৃষ্টি মহাবিশ্ব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলেও সমগ্র বিশ্বে আল্লাহর প্রশংসাকারী ও আল্লাহর মহিমা প্রকাশকারী ধর্মবিশ্বাসের কোনো পরিবর্তন হয়না।
আল কোরআন বার বার ঘোষণা করা হয়েছে, “আসমান ও জমীনে যা কিছু আছে সবাই আল্লাহর প্রশংসা করে।”( আল কোরআন ৫৭ : ১, ৬১ : ১ এবং ৬৪ : ১ ) এবং যবুরে আছে, “আসমান আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে।” (স্লাম ১৯ : ২)
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: