ভবিষ্যতের ইসলাম ও ইসলামের ভবিষ্যৎ


ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2023-04-04 21:21:54 BdST | Updated: 2024-05-15 18:35:02 BdST

ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (Institute of Islamic Thought and Research) এর ‘আন্তর্জাতিক স্কলারদের নিয়ে জুম কনফারেন্স- ০৯’ অনুষ্ঠিত হলো উম্মাহর প্রখ্যাত আলেম, চিন্তাবিদ, উসূলবিদ ও মুতাফাক্কির প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মধ্যমে।  

আলোচনার বিষয় ছিলো “ভবিষ্যতের ইসলাম ও ইসলামের ভবিষ্যৎ”।

আমরা কেমন ভবিষ্যৎ চাই এবং আমাদের বর্তমান চিন্তাধারার আলোকে কেমন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে– এটি তিনি তার আলোচনায় বিস্তারিত তুলে ধরেন। অতঃপর আমাদের বর্তমান সংকটময় অবস্থানের কারণ হিসেবে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

১) সংকটকে সামনে রেখে ইতিহাসকে ভুলভাবে পাঠ করা।

২) ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কোন তত্ত্ব নেই এবং এব্যাপারে চিন্তা না করা। অথচ আমাদের নবীগণ, কিতাবসমূহ সর্বদাই ভবিষ্যতের ইশতেহার দিয়েছেন।

৩) আখেরি যামানার ধারণা এবং এ প্রসঙ্গে আমাদের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত তা ভুলভাবে এবং ব্যাপকভাবে প্রচার করা। ফলশ্রুতিতে যুবসমাজের কাজের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে!

৪) করণীয় সম্পর্কে চিন্তা না করে কীভাবে আমাদের পতন হলো, কেন পেছনে পড়ে গেছি এ বিষয়ে প্রচুর চিন্তা করা! অথচ এ বিষয়ের এত সমালোচনা করেও অর্থ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি।

৫) সভ্যতার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহ, অর্থাৎ উম্মাহর অভ্যন্তরীণ বিভাজনসমূহ।

আলোচনায় তিনি আরও বলেন, মুসলমান হিসেবে আমাদের সাময়িক পতনের সময়কাল দিন যত যাচ্ছে, তত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো অতীত গৌরবোজ্জল ইতিহাসের কোলে আশ্রয় নিয়ে আত্মতৃপ্তি অনুভব করা, যা উম্মাহ হিসেবে আমাদের জন্য কখনোই কাম্য নয়। 

মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো মানবতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা; পূর্ববর্তীদের কাজের অভিজ্ঞতা, বর্তমানের প্রয়োজনীয়তা আর ভবিষ্যৎ চাহিদার আলোকে নিজেদের বয়ান তৈরি করে আপতিত পতনকালের অমানিশা কাটিয়ে খুব শীঘ্রই মানবতাকে আলোর মুখ দেখানো। মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে আমরা বাধ্য।

আলোচনার শেষদিকে সম্মানিত উস্তাদ যুবকদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ বিনির্মানের ক্ষেত্রে অসাধারণ মূলনীতিসমূহ তুলে ধরেন এবং নসীহত প্রদান করেন।

কনফারেন্সে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার শেষে ছিলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। অংশগ্রহণকারী ভাই-বোনরা প্রশ্ন তুলে ধরেন এবং সম্মানিত আলোচক প্রতিটি প্রশ্নের অসাধারণ জবাব প্রদান করেন।

সম্মানিত আলোচক জনাব ড. প্রফেসর মেহমেদ গরমেজ এর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যটি নিম্নে তুলো ধরা হল :

আজ আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করবো। এ বিষয়টি খুব কমই আলোচনা করা হয়ে থাকে। মুসলিম উম্মাহ সাধারণত এই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা পছন্দ করেনা। আজ আমরা ভবিষ্যতের ইসলাম এবং ইসলামের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করা ইনশাআল্লাহ।

আমি আপনাদেরকে একটি গভীর চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে চাই। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, এক ঘন্টা চিন্তা করা এক হাজার ঘন্টা নফল ইবাদাত করার চাইতে বেশী উত্তম। আরো একটি হাদীস আছে- যার দুই দিন এক হল, সে ক্ষতিগ্রস্ত হল। আমি এটাকে এভাবে বলতে চাই যাদের দুই শতাব্দি একরকম হল তারা সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হল। আমরা ইসলামী খেলাফতের পতনের পর দ্বিতীয় শতাব্দিতে প্রবেশ করেছি। আজ আমরা একটি কঠিন সময়ে উপনীত হয়েছি এবং একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি, আমাদের উচিত হবে এই সংকটটাকে ফোকাস করা। এই সংকট থেকে উত্তরনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ভবিষ্যতের দিকে ফোকাস করতে হবে। এবং যারা ভবিষ্যতের চাবিকাঠিকে ধরে রাখে সেই সকল যুবকদের ভিতরে আমাদেরকে পরিবর্তনের শিখা জালিয়ে দিতে হবে, যারা পরিবর্তনকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে পারে।

আজকে এই সংকট থেকে উত্তরনের জন্য আমাদেরকে প্রশ্নটি করতে হবে-

১। ইসলামের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে আমরা কেমন একটি ভবিষ্যত চাই- এটা প্রথম প্রশ্ন।

২। তারপর আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে আমরা ভবিষ্যত সম্পর্কে যে বিকৃত ধারণাকে পোষন করি, এই ধারণার উপর ভিত্তি করে কি ধরনের ভবিষ্যত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ৩য় প্রশ্ন : আমরা কি আগামী শতাব্দিতে উম্মাহ হিসাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবো,নাকি বিশ্বশক্তির উপর নির্ভরশীল একটি জাতি হিসাবে আমরা আমাদের কাল অতিক্রম করবো। আমরা আজ মুসলিম উম্মাহ হিসাবে একটি হতাশার ঢেউয়ের তরঙ্গের মধ্যে বসবাস করছি। অথচ আমরা যদি এই শতাব্দির শুরুর দিকে তাকাই তবে আমরা দেখতে পাই যে, আমরা সবাই এই শতাব্দি শুরু করছিলাম আশা এবং প্রাণ শক্তি নিয়ে, আমরা সবাই চিন্তা করেছিলাম যে আমাদের বিভিন্ন দেশে সমাজ অর্থনীতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে আমরা একটি ভূমিকা রাখতে পারবো এবং পুনর্জাগরন করতে পারবো। খেলাফতের পতনের পর বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র সমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন আমরা এখানে তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে আপনারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অনেক আশা ও ভরসাকে সামনে রেখে। আমরা যদি আজ ওআইসির দিকে তাকাই, ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে ৫৭ টি দেশ। এবং প্রত্যেকটা দেশেরই অনেক আশা এবং স্বপ্ন আছে।

আমরা যদি দেখি যে আমাদের বিগত শতাব্দির যে আশা ভরসা, বিগত শতাব্দির যে সাহিত্য, এটা বিজয়ী সাহিত্য থেকে কিভাবে আমরা আমাদের দুঃখ দুর্দশা কমাতে পারি এ পর্যায়ে চলে আসছে। আমাদের আশার যে সাহিত্য ছিল, সেটা আমাদের নূন্যতম ক্ষতি কাটিয়ে কিভাবে সামনে এগুতে পারি এ পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের নেতৃত্বের পর্যায়ে একটি দ্রুত পতনশীলতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা এমন একটি শতাব্দিতে এসে উপনীত হয়েছি, যে শতাব্দিতে কোন একটি দেশ নেই যা নিজেদের পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, বরং তাদের সকলের মধ্যকার এসকল হতাশা নিয়ে অন্য সকল উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিগত শতকে মুসলিম উম্মাহ একটি অগ্নিকুন্ডে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া, লিবিয়া, মিশরসহ বাকী সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ আগুনে পুড়ছে। এখানে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি ঘটেছে তা হচ্ছে আমাদের যে ভবিষ্যৎ ধারণা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এটাকে বিকৃত করে প্রজম্ম থেকে প্রজম্ম ধরে আমাদের যুব সমাজের সামনে আনা হচ্ছে, তাতে আমাদের যুব সমাজ তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মানের প্রেরণা ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে- যেটাকে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করি। এবং আমার মতে এর পাঁচ টি কারণ রয়েছে- যে পাঁচটি কারণে আমরা আমাদের যুব সমাজের কাছে ভবিষ্যতের বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারিনি। তবে এর আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে আজ আমরা পাঁচ টি মূল কারণ সম্পর্কে আলোচনা করবো-   

১। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে ইতিহাসকে ভুলভাবে পাঠ করা, সংকটকে সামনে রেখে ইতিহাসকে পাঠ করার কারণে আমরা ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করতে পারছিনা।

২। ইতিহাসের শিক্ষা থেকে ভবিষ্যতে বিনির্মান করতে না পারা। অর্থাৎ আমাদের কাছে ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন তথ্য নাই। অথচ মহাগ্রন্থ আল কোরআন হচ্ছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি গ্রন্থ। আমাদের পয়গাম্বর হচ্ছে ভবিষ্যত কে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এমন একজন পয়গাম্বর।

৩। আখেরী যামানার বিষয়টাকে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে আমাদের কাজের প্রেরণা ও আগ্রহ হারিয়ে গেছে।

৪। করণীয় সম্পর্কে চিন্তা না করে কীভাবে আমাদের পতন হলো, কেন পেছনে পড়ে গেছি এ বিষয়ে প্রচুর চিন্তা করা। অথচ এ বিষয়ের এত সমালোচনা করেও অর্থ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি।

৫। সভ্যতার অভ্যন্তরে সংঘাত, আমাদের মধ্যে বিভাজন, দ্বন্দ সংঘাত।

এখন আমি আপনাদের সামনে এই পাঁচ টি বিষয়ে উদাহরন সহ তুলে ধরবো।

১। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে ইতিহাসকে ভুলভাবে পাঠ করা, ভুল পন্থায় পড়া। আমরা হচ্ছি এমন একটি সভ্যতার সন্তান যে সভ্যতার পতন ও যন্ত্রনা অনেক বেশি দীর্ঘায়িত হয়েছে। এটা যত বেশি দীর্ঘয়িত হয়েছে আমরা তত বেশি অতীতের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা যখন যখন বড় বড় সংকেটর মুখোমুখি হই, তখন অতীতকে প্রশংসা করা শুরু করি। যখন আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন আলোর দিশা পাইনা, তখন অন্ধকারে পড়ে যাই, আর অতীতকে অধিক পরিমানে অতিরঞ্জিত করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা আমাদের অতীতের দিকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য ফিরে যাচ্ছি না। ঐ সময়ে যে ভুল ভ্রান্তি হয়েছে সেগুলোকে অনুসন্ধান করার জন্য আমরা যাই না। আমরা দুটি কারণে অতীতের কাছে যাই। ১. অতিরঞ্জিত করা বা পবিত্র করা ২. তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। কখনো আমরা সেসব ঘটনাকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাঠ করে থাকি, কখনো এভাবে পাঠ করি যেন এটা একটা পবিত্র খাতা, যেখানে কোন ধরনের ভুল ভ্রান্তি বা কোন নেতিবাচক কোন কিছু ঘটতে পারেনা। অপর দিকে কেউ কেউ এভাবে তুলে ধরে যেন ইতিহাসের সবচাইতে খারাপ সময় বা আমাদের ইতিহাস অন্ধকারে ভরপুর। চিন্তার এই উভয় ধারা আমাদেরকে আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করছে। 

আমরা সবাই জানি যে আমাদের ইতিহাস হচ্ছে মহান একটি ইতিহাস, কারণ তা মানব সভ্যতার ইতিহাস। এটা ভুল করে আবার শেখা, ভুল করে আল্লাহর প্রতি প্রশংসা করা এধরনের স্বাভাবিক একটি বিষয়।

আয়াতঃ তিলকা উম্মাতান কাদ খালাত… অর্থাৎ অতীত উম্মত সমূহ অতিবাহিত হয়েছে, তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্য, আর তোমরা যা অর্জন করবে তা তোমাদের জন্য।

দুঃখ জনক হলেও সত্য যে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা যেদিকে পরিচালিত হব, আমরা সেই দিকে পরিচালিত হতে পারছিনা। কখনো এমন হয় যে উম্মাহ হিসাবে আমাদের দেহ বর্তমানে থাকলেও আমাদের আত্মা যেন অতীতে বসবাস করছে। ইবনে খালদুন এই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন- যারা অতীতের গুহায় অন্ধকার কূপে পড়ে থাকে, তাদের পক্ষে কখনোই একটি ভবিষ্যৎ বিনির্মান করা সম্ভব নয়। 

প্রসঙ্গক্রমে ইবনে খালদুলের আল মুকাদ্দিমা বইটি খুব ভালভাবে পাঠ করার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করবো।

এ হিসাবে আমাদের পতনের প্রথম কারণ হচ্ছে আমরা ইতিহাসকে সঠিকভাবে পাঠ করতে পারিনা এবং তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে না। ভবিষ্যৎ বিনির্মানের জন্য অবশ্যই আমাদেরকে ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।

২. তারপর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, মুসলমানদের মধ্যে ভবিষ্যতের যে চিন্তা তার অভাব। আমরা যদি সত্যের মুখোমুখি হই, তবে দেখি যে, আমরা মুসলিম উম্মাহ কেন জানি ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা পছন্দ করিনা। আমরা এটাকে অদৃশ্য বা গায়েব মনে করি, যা ধরা যাবেনা, ছোঁয়া যাবেনা এমন। আমরা সব সময় বলি গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এ ধরনের একটি প্রবণতা আমাদের রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। (৫৯:১৮)

আর এই গাদ বা আগামীকাল শুধুমাত্র আখেরাত নয়। আগামী বলতে আমরা যা কিছু বুঝি, এটা তার সবগুলোর সাথে সম্পর্কিত। এখানে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক চিন্তা বলতে যা বুঝাচ্ছি তা আসলে দিবা স্বপ্ন নয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার ক্ষেত্র অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার কথা বলছিনা। আমাদেরকে ভবিষ্যতের রাজনীতি, সামাজিকতা ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে কারণ এটা হচ্ছে অন্যতম সুন্নাতুল্লাহ, মহান আল্লাহ তায়ালার রীতি নীতির একটি বিষয়।

একটি সভ্যতার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, ভবিষ্যত সম্পর্কে সঠিক ভাবে চিন্তা করতে না পারাটা তাদের পতন ডেকে আনতে পারে। সময়ের বিষয়ে ইসলামের যে ধারণা তার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে এটা সমান্তরাল কিছু নয়, বা একটা সূচনা বিন্দু থেকে শুরু হয়েছে, বা যেটা চলে গেছে, এর কোন মূল্য নাই, বিষয়টা এমন নয়। বরং আমাদেরকে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতকে একত্রিত করে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। সময়কে নষ্ট করার মধ্যে আমরা কোন ধরনের ফলাফল পাব না। অতীত শুধুমাত্র অতীত নয়, যেটা চলে গেছে এমন নয়। আমাদের আজকের দিন, সেটা হচ্ছে গতকালের ভবিষ্যত। আজকের অতীত অন্যান্য কওমের জন্য বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ছিল। এ কারণে মূলত আমরা অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাধ্যমে একত্রে বসবাস করছি। মুসলিম উম্মাহর পুরো সময়টাকে আমরা যদি একনজরে দেখি তাহলে দেখবো যে ইতিহাস বার বার আমাদের মধ্যে পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আমরা যদি আমাদের যুব সমাজের দিকে দেখি যে, তারা তাদের পূর্বপুরুষদেরকে অনুকরন ও অনুসরন করে যাচ্ছে। যেমন আমরা আজকের ইখতেলাফের দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো যে, এই একই ইখতেলাফ সমূহ অতীতেও ছিল। এই কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা উম্মাহর উপর ফরজে কিফায়া। আমরা সবাই যদি এটা পরিত্যাগ করি তাহলে সবাই দোষী হব। এজন্য আমি আশা করি যে আপনারা এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের দেশ, আপনাদের দেশ, অতীতে এবং বর্তমানে সবখানে অতীত ইফতিলাফ নিয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আমরা আপনাদের থেকে আশা করি যে আপনারা এসবকে উপেক্ষা করে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কাজ করবেন। আমি অনুরোধ করবো, আপনারা এরকম বলবেন না যে, ভবিষ্যৎ হচ্ছে গায়েব, আর গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ভবিষ্যত হচেছ সুনানুল্লাহ। এ দিকে দৃষ্টি রেখে ভবিষ্যতকে কিভাবে বিনির্মান করা যায় সেজন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন।

একবার আলবার্ট আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কেন এত চিন্তা করেন। তিনি সংক্ষেপে গভীর একটি জবাব দেন যে, কেননা আমি খুব শীঘ্রই সেখানে বা ভবিষ্যতে বসবাস করবো।

এজন্য মুসলিম হিসাবে কেমন একটি ভবিষ্যৎ চাই সেই বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ আমরা ভবিষ্যতে বসবাস করবো। 

৩. তৃতীয় যে বিষয়টা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তা হচ্ছে আখেরী যামানার বিষয়টি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া। এই বিষয়টা মুসলিম সমাজে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আখেরী যামানার চিন্তাটা মুসলিম মানষে গভীর ও অন্যতম একটি সংকট। যামানা

আমরা ফুকুইয়ামাকে এন্ড অব দ্যা হিস্ট্রি বা ইতিহাসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে, এজন্য নিন্দা করে থাকি (The End of History and the Last Man, by Francis Fukuyama)। অথচ দুঃখজনক যে আমরা মুসলিম উম্মাহ জগতেরই সমাপ্তি ঘোষণা করেছি। আমাদের অবস্থা হচ্ছে এমন যে সন্তান জন্মগ্রহণ করার আগেই শোকে কাতর। আখেরি যামানার চিন্তা আমাদের মাঝে এমন একটি চিন্তা নিয়ে এসেছে যে, আমরা এমন একজন মানুষের অপেক্ষা করছি যে আমাদেরকে উদ্ধার করবে ভেবে অলস বসে আছি। যিনি এসে সব কিছু পরিবর্তন করে দিবেন, এসব হতাশা সব কিছু দূরভীত হয়ে যাবে। অথচ মহান আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করবেন না যতক্ষন না সেই জাতি তার পরিবর্তনের চেষ্টা করে। আমরা যদি ভবিষ্যতের সম্পর্কে চিন্তার সমাপ্তি ঘোষণা করে দিই তাহলে কিভাবে আমরা যুবকদের কাছ থেকে পরিবর্তনের আশা করতে পারি। আমরা বলে দেই যে ইমাম মাহদী আসবেন, তিনি এসে আমাদেরকে সকল দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্ত করবেন। যে জাতি তার ভবিষ্যৎকে কোন কল্পিত মাহদীর সাথে সম্পর্কিত করে দেয়, সে জাতির কোন ভবিষ্যৎও নেই, তার কোন মাহদীও নেই। এখন আপনারা বলতে পারেন যে, আমি ইমাম মাহদীর আগমনকে অস্বীকার করছি। আমি তা অস্বীকার করছি না। বরং আমি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করতে চাই, যাতে সঠিক মাহদী আসে। আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যৎকে মাহদীর সাথে সম্পৃক্ত করে দিই এটা হচ্ছে আমাদের জন্য ভুল একটি পন্থা। মাহদীর চিন্তা সুন্নীদের চাইতে শিয়াদের মধ্যে আরো প্রকট। সুন্নতে কিয়ামতের যে আলামতের কথা বলা হয়েছে, আমি সে বিষয়ে কথা বলছিনা। এগুলো আমাদের দ্বীনের এবং আকীদার একটি অংশ। যা অস্বীকার করার উপায় নেই। যারা কিচ্ছা কাহিনী বানিয়ে আমাদেরকে যুবকদেরকে কিয়ামাতের আলামত সম্পর্কে ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত করেছে, আমি সেই বিষয়ে কথা বলছি। তারা এ বিষয়টাকে এমনভাবে আলোচনা করে থাকে যেন এছাড়া আর কিছুই নেই। কোরআন ও সুন্নতে সাবেত হিসাবে কেয়ামতের যে সব আলামত বলা হয়েছে সেগুলো মানুষেকে কাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং সতর্ক করার জন্য। 

একজন সাহাবী এসে রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, কিয়ামত কবে হবে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এজন্য কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ। সে আবার দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করে কিয়ামত কবে হবে, তিনি তাকে জবাবে আবার জিজ্ঞেস করেন তুমি কিয়ামতের জন্য কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ। তৃতীয় বার একই প্রশ্ন করেন এবং তিনি একই জবাব দেন। অপর একটি হাদীসে এভাবে এসেছে যে যদি তোমরা জান যে আগামী কাল কেয়ামত হবে, আর তোমার হাতে একটি গাছের চারা থাকে, তাহলে সেটাকে রোপন কর। অর্থাৎ কেয়ামত ঘটবে এই ভেবে তুমি চারা রোপন থেকে বিরত থেক না। এই হাদীসটি শুধু গাছ রোপন করার ফজীলত সম্পর্কে নয়, এটা হচ্ছে ভবিষ্যৎ বিনির্মান করার ফজিলত সম্পর্কে। এ হাদীস ঐ হাদীস যাতে আমরা আখেরি যামানের দিকে মনোনিবেশ না করে কিভাবে ভবিষ্যৎ বিনির্মান করবো সেই দিকে মনোনিবেশ করি।

৪. চতুর্থ বিষয় হচ্ছে মুসলিম উম্মার কেন পতন হল এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা। বিগত একশ বছর যাবত আমরা যে প্রশ্নটা করে আসছি যে কেন আমরা পেছনে পড়ে থাকলাম। অন্যরা বা পাশ্চাত্য কেন সামনে এগিয়ে গেল। অথচ প্রাচ্য পেছনে পড়ে থাকল, পাশ্চাত্য কেন এগিয়ে গেল। মুসলিম জাহানে এই বিষয়ে এত বেশি গ্রন্থ রচিত হয়েছে যে শুধু এসব গ্রন্থ নিয়ে একটি পূর্ণ বিশাল একটি লাইব্রেরী তৈরী করা সম্ভব। স্বয়ং এই সাহিত্যটাও আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষেত্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বিগত দুইশ বছর যাবত এরকম সাহিত্য রচিত হচ্ছে। আমাদের সামগ্রিক সংস্কৃতিতে এটা বিশাল প্রভাব ফেলছে। এমনকি আমরা দুনিয়াকে দুইভাগে বিভক্ত করেছি। অগ্রসর ও অনগ্রসর। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে পাঠ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রশ্নটি একটি গভীর সমস্যা সৃষ্টি করে। পেছনে পড়ে যাওয়া ও অগ্রসর হওয়ার মানদন্ড ও কারণ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের অগ্রসর ও অনগ্রসর হওয়া অন্যের তৈরী করা মানদন্ড দিয়ে। আমরা এগুলো বিবেচনা করা শুরু করেছি, আমাদের মানদন্ড বাদ দিয়ে। অথচ আমদের সমস্য তাদের সমস্যা নয়, কিংবা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারেনা, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে এই দুই সভ্যতার মধ্যে তুলনামূলক বিষয়ে সমস্যাটি নিপতিত। মূল্যবোধের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের যে মূল্যবোধ বা সভ্যতার মূল্যবোধ তা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য বা প্রযোজ্য হতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তা অন্যদের সভ্যতার উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠা। এমনকি মুসলিম সভ্যতার পতনের কারণ নিয়ে যে চিন্তা ধারা অন্যদের পতনের কারনের উপর ভিত্তি করে চিন্তা করা হয়, যা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। অথচ আমরা যা করছি তা হচ্ছে অন্যের কাছ থেকে ধার করা মানদন্ড দিয়ে আমাদের নিজেদেরকে বিচার করছি, আমাদের বিজয় এবং অগ্রগতি কিভাবে হবে- তা অন্যদের মানদন্ড দিয়ে চিন্তা করছি এবং অন্যকে পরাজিত করার চেষ্টা করছি তাদের মানদন্ড দিয়ে, যা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।

বিগত একশ বছর ধরে আমাদের বড় বড় আলেম ও চিন্তাবিদরা বলছে যে, পাশ্চাত্যের পতন হবে, পতন হবেই। তাদের যখন পতন হবে তখন আমরা উঠে দাঁড়াবো। অথচ তাদের পতন হয় নাই, কিছুই হয়নাই, আমরা উঠে দাঁড়াতে পারি নাই। এটা আমাদের জন্য জায়েজ নয়। আমাদের উপর দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের সভ্যতাকে নতুন করে বিনির্মান করা।

“মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো”, লেখক- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ । এই বইটি এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। সবাইকে এই বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করবো।

৫. পঞ্চম যে কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মানের ক্ষেত্রে, তা হচ্ছে সভ্যতার অন্তদ্বন্ধ। মতপার্থক্য ও মতানৈক্যের কারণে আমরা একটি ক্লান্ত সময় অতিক্রম করছি, এমন একটি সংকটময় সময়ে উপনীত হয়েছি। এগুলো এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, আমরা নিজেরাও বিভিন্ন ধরনের দ্বন্ধ উৎপাদনে পারদর্শী হয়ে পড়েছি। দুঃখজনকে যে আমাদের বড় বড় পন্ডিত ও চিন্তাবিদরা এগুলোকে সাধারন ও সরলীকরন করে ফেলেছেন এবং এগুলো সমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এগুলো সমাধান করার মত যোগ্যতা ও ক্ষমতা তাদের নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের ওলামায়ে কেরাম এগুলোকে ক্ষুদ্র একটি জায়গা থেকে বৃহৎ একটি পরিসরে নিয়ে এসেছেন। বুদ্ধিভিত্তিক ক্ষেত্রে আমাদের যে পার্থক্য এটা আমাদেরকে রাজনীতি করার ক্ষেত্রে বা রাজনীতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। এমনকি আমরা ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করার মাধ্যমে যেমন উপকৃত হইনি বা ধর্ম ও রাজনীতিকে একত্রিত করনের মাধ্যমেও উপকৃত হইনি। আমাদের অনেক বড় বড় আলেম রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বে অংশ গ্রহন করেছেন এবং সংকটকে আরো ঘনীভূত করার ক্ষেত্রে ভুমিকা রেখেছেন। আমরা যদি এই ধরনের অর্থহীন দ্বন্ধ সাংঘাতে জড়িত হয়ে পড়ি তাহলে তা আমাদের জন্য কোন ভাল ফলাফল বয়ে আনবে না। আলেমদের এই ধরনের অবান্তর অবাঞ্চিত কথা বলার কারণে যুবকদের মধ্যে তাদের একটা খারাপ চিত্রায়ন হয়েছে। যুবকদের কাছে এটা মনে হচ্ছে যে এসকল আলেম বা পন্ডিতদের দ্বারা ভবিষ্যতের বিনির্মান করা সম্ভব নয়। যদি তারা এই ধরনের সামান্য বিষয়ে দ্বন্ধ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের দ্বারা কিভাবে ভবিষ্যৎ বিনির্মান সম্ভব- এই প্রশ্নটি আমরা যুবকদের মাঝে দেখতে পাই।

যদি বিষয়টি এমনই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের এখান থেকে মুক্তির উপায় কি? আমাদের কি কোন পথ আছে? আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কি সত্যি বিনির্মান করতে পারবো?

আমাদের যদি হতাশার অনেক কারণ থাকে, তাহলে হতাশা থেকে উত্তরন হওয়ার, আশাবাদী হওয়ার, আশা সঞ্চার করারও অনেক উপায় আছে। যেটা অসংখ্য অগনিত। আমরা এখনও সক্ষম। আমরা যদি আমাদের অতীতকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি, তার উপর ভিত্তি করে আমাদের ভবিষ্যত ও বর্তমানকে সুন্দরভাবে বিনির্মান করতে পারি। সঠিক একটি ভিত্তির উপর নির্ভর করে। এই বিষয়টা আমি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এবং আমি সব সময় বলি যদি সেখানে ইমান থাকে তাহলে অবশ্যই সম্ভাবনা আছে। আমরা যদি আমাদের গ্রন্থ, কিতাব, সুন্নত এবং অতীত ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অনেক উপায় আছে।

আমাদের হাতে এমন মূল্যবোধ এবং এমন সব বিষয় রয়েছে যা দিয়ে শুধু মুসলিম উম্মাহ নয় সমগ্র মানব জাতির উপর নেত্বত্ব দেওয়ার যোগ্যতা বা সক্ষমতা  আমাদের হবে। নিঃসন্দেহে আমাদের মহাগ্রন্থ আল কোরআন ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ এবং আমাদের রাসূল (সাঃ) ভবিষ্যতকে বিনির্মান কারী একজন রাসূল। আর রিসালাতে মোহাম্মদী হচ্ছে বিশ্বজনীন শ্বাশত ও চিরন্তন। যাদের কাছে এই গ্রন্থ আছে, নবী আছে, রিসালাত আছে তারা অবশ্যই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এবং নেতৃত্ব প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইসলামই হচ্ছে মানবতার জন্য সবচেয়ে আশা ও ভরসার স্থল। আমি এই বিষয়টা একটি রাজনৈতিক শ্লোগান বা রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা হিসাবে বলছিনা। বরং আমাদের বর্তমানে যে অবস্থা এবং যে রেফারেন্স এটার উপর ভিত্তি করে আমি এটা নির্ধিদ্বায় বলতে পারি। আমাদের ইসলামের মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে, পরিবর্তনশীল এবং স্থায়ী বিষয় সমূহ, যে এগুলো দিয়ে সমগ্র মানবতা আজকে যে সমস্যার সম্মুখীন এগুলোকে খুব ভাল ভাবে সমাধান করা সম্ভব। আমরা যদি পাশ্চাত্যের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, শত শত প্রতিষ্ঠান আছে তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছে। কিন্তু দুঃখজনক যে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান খুব নগন্য বা বলতে গেলে নাই। যারা আমাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মানের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমাদের সামনে পেশ করবে। যেমন ইলমুল উমরান, এ বিষয়ে আমাদের কোন চিন্তা ভাবনা বা কাজ নাই, যে বিষয়ে ইবনে খালদুন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইলমুল উমরানের দুটি বিষয় হচ্ছে, যা ঘটেছে- যেহেতু তা সুনানুল্লাহ ছিল, তা থেকে থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা। এই কারণে আমাদের মুসলিম উম্মার মধ্যে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন যারা ভবিষ্যৎ বিনির্মানের জন্য কাজ করবে। এই ভবিষ্যতের চিন্তা ভাবনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং আমাদের মুসলিম যুবকদেরকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্ম একটি ভবিষ্যৎ বিনির্মান করতে পারে, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি এবং রাসূল (সাঃ) এর সামনে আমরা দাঁড়াতে পারি।

আমি আমার আলোচনাকে তাতারী একজন বিখ্যাত আলেম এর বক্তব্য দিয়ে শেষ করবো। তিনি বলেন মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তাজদীদী ইহইয়া ও বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন ও সংস্কারের সৃষ্টি হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের নিজেদের অবস্থাকে পরিবর্তন করা, নিজেদেরকে তাজদীদ, ইসলাহ করার পরিবর্তে আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি ইসলামের তাজদীদ ও ইসলাহ করার জন্য। ইসলাম কখনো পুরাতন হতে পারেনা, তাকে কিভাবে নবায়ন করবো। আমাদের নিজেদেরকে নবায়ন করতে হবে। ইসলাম কখনো অসুস্থ হতে পারেনা, বরং আমরা অসুস্থ, আমাদের নিজেদেরকে সুস্থতার জন্য চেষ্টা করতে হবে, আমাদের নিজেদেরকে সুস্থ করতে হবে। ইসলাম কখনো মৃত্যুবরণ করতে পারেনা, আমাদেরকে এখানে ইহইয়া করতে হবে। মোটকথা আমাদেরকে সংস্কার করতে হবে। নবায়ন  ও পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। ইসলামের যে নদী এ নদী বিশাল মহান নদী। আমরা মুসলিম হিসাবে আমাদের উচিত হবে এ নদীর প্রবাহমানতাকে ধারাবহিক রাখা। যাতে এই নদীর প্রবাহমানতা থেকে আমরা আমাদের নিজেদের অংশ নিয়ে নিতে পারি। এর মাধ্যমে যাতে আমরা আমাদের দুঃখ দুর্দশাকে দূরভীত করতে পারি। আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট এ দোয়া করি তিনি যেন আমাদেরকে যোগ্যতা দান করেন এবং ক্ষমতা দান করেন যাতে এই নদীকে প্রবাহমান রাখতে পারি এবং প্রবাহিত করতে পারি। এই বিষয়টি আপনারা যারা উপস্থিত উম্মতের যুবকরা আপনাদের কাজ ও প্রচেষ্টার সাথে সম্পৃক্ত।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


সম্পাদক নির্বাচিত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কি খিলাফত পতনের যতগুলো কারণ আমরা দেখি তার মধ্যে একটা ছিল ইহুদীদের...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-11-03 21:24:07

ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের কট্টরপন্থা কাশ্মীর অঞ্চলটিকে সমৃদ্ধ বা...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-01-22 09:36:01

ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (Institute of Islamic Thought and Re...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-04-04 21:21:54

বিজ্ঞানের ইতিহাস এমন ব্যক্তিদের দ্বারা পরিপূর্ণ যারা গবেষনার ক্ষেত্রে...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-03-14 19:50:53

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা মুসল...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2022-12-23 22:23:11

প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ ছিলেন একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, লেখক, সমাজ চিন্...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-03-29 21:02:52

আজ ১২ আগস্ট, কবি মতিউর রহমান মল্লিকের মৃত্যুবার্ষিকী।  ২০১০ সালের এই দ...

সম্পাদক নির্বাচিত | 2023-08-12 16:28:02