Questioner
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
Question

কীভাবে অলসতা কাটিয়ে উঠবো? আসসালামু আলাইকুম। আমি কয়েকদিন যাবত আলস্যে ভুগছি এবং কিছু সময়ের জন্য কাজে কোন প্রণোদনা পাচ্ছিনা। এর ফলে আমার একাডেমিক শিক্ষা এবং হাফেজ হওয়ার প্রচেষ্টা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক বার আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি এবং সত্যিকারভাবেই নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করেছি। ফলে এক-দুই সপ্তাহ কিংবা কয়েকদিনের জন্য আমি কাজ করার প্রেরণা খুঁজে পেয়েছি।কিন্তু, সে প্রেরণা ছিল ক্ষণস্থায়ী। বুঝতে পারছি আমি ও শয়তানের ধোঁকায় পড়েছি , কেননা অনেকদিন ধরেই আমি কোন বিষয়ের উপর ঠিক মনযোগ ধরে রাখতে পারছিনা। আপনি কি এ বিষয়ে আমাকে কোন পরামর্শ দিতে পারবেন কিংবা রাসূল সাঃ এর এমন কিছু দোয়া বলে দিতে পারবেন – যাতে আমার অলসতার অভ্যাস ত্যাগ করে ফলপ্রসূ জীবন যাপন করতে পারি। যাজাকাল্লাহ খাইর।

Counselor
মরিয়ম বাকমেইর;  অনুবাদঃ মোল্লা ফারদিদ
Answer

ওয়ালাইকুমুস সালাম। অলসতা সহজাত কোন বিষয় নয়। যখন লোকেরা বলে যে তারা অলস হয়ে গেছে , স্বভাবতঃ এটা হল তাদের নিজেদের চলতি কাজ নিয়ে তাদের মানসিক দোটানা অবস্থা। এর ফলে তাদের সহজাত আগ্রহ, প্রেরণা হারিয়ে যায়। তুমিও একজন যুবক। হয়ত তুমিও তোমার জীবনের লক্ষ্য কিংবা  যাত্রাপথ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছো। কখনো কখনো এরকম দ্বিধা-সিদ্ধান্তহীনতা যেকোন ব্যক্তিকে বিচ্যুতির মুখে ঠেলে দিতে পারে। এর ফলে ব্যক্তির মনযোগ নিজের কাজ থেকে অন্যত্র সরে যায়। যখন তোমার মনে হবে যে, তুমি আর ব্যক্তিগত উন্নয়ন করতে পারছোনা তখন তোমার উচিত হবে থেমে যাওয়া, বিশ্রাম নেয়া এবং নতুন করে শুরু  করা। বন্ধুদের দ্বারা বিচুতির পথে যাত্রা, কম্পিউটার গেম খেলা কিংবা এমন কোন কাজ করে সময় কাটানো যা তোমার ব্যক্তিগত উন্নতিতে কোন ভূমিকাই রাখবেনা – এগুলো করার চাইতে তোমার উচিত হবে সকল কাজ থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নেয়া ।

 

সময় বের করে তোমাকে খোঁজ করতে হবে তুমি তোমার জীবনের কোন পর্যায়ে আছো আর আগামী দশ বছরে তুমি নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চাও। ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ থেকেই শুরু কর। নিজেকে জিজ্ঞাসা করো,  মৃত্যুর পর তোমার নামের শোকবার্তায় কি লেখা দেখতে চাও। এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কি উদ্দেশ্য? এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকার সময় তুমি জগত ও মানবতাকে কি দিতে চাও? আল্লাহর কাছে হেদায়াতের দিশা লাভ এবং সঠিক যাত্রাপথ দেখিয়ে দেবার জন্য দোয়া কর। যাবতীয় লক্ষ্য  অর্জনের কর্মপন্থা ঠিক করে নাও। নিজেকে যখন জিজ্ঞাসা করবে কেন অন্য কাজ গুলোর বদলে নির্দিষ্ট ‘এই’ কাজটাই করছ, তখন এই লক্ষ্যগুলো মনে রাখবে। এর সাথে সাথে ভারসাম্য রক্ষা ও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো লোকেরা অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেসময় তাদের পুনঃশক্তি সঞ্চায়নের জন্য কিছু সময়ের বিশ্রাম নেয়া উচিত।  

 

তোমাকেই ঠিক করতে হবে, তুমি কি দ্বিধা-দ্বন্ধে ভুগছ? তুমি কি তোমার জীবনের লক্ষ্য নিয়ে দিশেহারা নাকি  অধিক কর্মভারে জর্জরিত। আসলে, আধুনিক এই ‘কোয়ান্টাম’ সময়ে আমাদের মাথার উপর অনেকের প্রত্যাশার বোঝা এসে পড়ে। সম্ভবত তিন থেকে পাঁচ বছরের লক্ষ্য নিয়ে  তুমি প্রতিদিন এক ঘন্টা সময় নিয়ে এক অধ্যায়ের পর আরেক অধ্যায় কুর’আন পড়তে ও শুনতে পার অথবা অন্যান্য কাজ কিংবা একাডেমিক পড়াশোনার ব্যস্ততা থাকলে দশ বছরের পরিকল্পনা  নিতে পার। তুমি নিজে তোমার অবস্থা সম্পর্কে ভাল জানো। প্রায়ই একাডেমিক পড়াশোনা, আধ্যাত্মিক উন্নতির লক্ষ্যের সাথে সাথে যদি আমাদের ঘাড়ে অনেকগুলো দায়িত্ব একসাথে এসে পড়ে এবং সেসব দায়িত্ব একলা আমাদের ঘাড়ে তুলে নেই তাহলে আসলেই আমরা হতবিহবল ও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বো। তখন তোমার উপর চরম ক্লান্তি ভর করবে , কোন কাজই ঠিকঠাক করতে পারবেনা।   

 

তাই, তোমার বিশ বছরের লক্ষ্য ঠিক করে লিখে ফেল। চল্লিশ বছর বয়সে তুমি কি করতে চাও? চল্লিশ বছর বয়সে তোমার লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা ঠিক করে নাও। এর সাথে সাথে কুর’আন হেফজ করার জন্য তোমার কর্মপন্থা কিংবা পদক্ষেপ গুলো ঠিক করে নাও। এখন তুমি সহজেই বুঝতে পারবে, পাঁচ বছরের মধ্যে তুমি বাস্তবিক অর্থে কোন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।     

 

হয়ত, পাঁচ বছরের মধ্যে কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হওয়া তোমার একটা লক্ষ্য। যদি আরো উচ্চতর শিখা নিতে চাও তবে একাডেমিক শিক্ষা শেষ করার জন্য দশ বছরের পরিকল্পনা নাও। কুর’আন হেফজ করতেও হয়ত একই পরিমাণ সময় লাগবে। তাই কুরআন হেফজ করাকেও তোমার লক্ষ্য অর্জনের একটা পদক্ষেপ হিসেবে নিতে পার। এভাবে ব্যবচ্ছেদ করে নিলে সব কাজই তোমার  কাছে সহজসাধ্য বলেই মনে হবে। এ কাজ গুলোর সাথে সাথে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়কেও যুক্ত করতে পার। তুমি যে অবস্থাকে অলসতা বলছ, সে অবস্থায় এ পদক্ষেপগুলো ভালই কাজে দিবে। সম্ভবত এটা তোমার সহজাত আগ্রহ ও প্রেরণাকে পুনঃসঞ্জীবিত করবে। যখনই আমরা কোন মহৎ কাজে নিজেদের কুরবানি করতে চাই – আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেদের সমর্পণের নিমিত্তে এবং মানবতার কল্যাণে তখনই আমাদের নফস আমাদেরকে পিছনে টেনে ধরে। এ মহৎ কাজগুলোর কথা শুনলে মনে হয় অনেক বড়, মহৎ, বিশাল কিছু কিন্তু আসলে আমরাতো সেই শুদ্ধ অবস্থায় ফিরে যেতে চাই  যে অবস্থায় আমরা সৃষ্টি হয়েছিলাম। আমরা কোন শো’এর তারকা , নায়ক-নায়িকা নই বরং আমরা খোদার সৃষ্ট মানবসত্তা । যারা সত্তার মূলে এক আজন্ম আকর্ষণ বোধ করে। আমাদের দেহঘরে যে আলো তথা রূহ আছে তা এ দুনিয়ায় কিছু সময়ের জন্য, কিন্তু এ দুনিয়ায় আমরা যে কাজ আনজাম দেয়ার জন্য এসেছি তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই তুমিও গুরুত্বপূর্ণ। তোমার অখন্ড মনযোগ ও গুরুত্বপূর্ণ।

 

আর হ্যা, আমরা সবাই ভিন্ন কিছু করতে চাই, বিশেষ কিছু করতে চাই। কিন্তু আমরা যে ভিন্ন কিছু করার জন্য ভাগ্যনিয়ন্ত্রিত তার সঠিক বহিঃ প্রকাশ তখনই ঘটবে যখন আমরা সে ভাগ্য তথা তাকদীরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করব। আর তাকদীর তো আল্লাহর ইচ্ছার প্রকাশ বৈ কিছু নয়। যেমন একটা ফলগাছ, এটা তার ফলদানের মাধ্যমেই এটার তাকদীর নির্ধারিত কাজ সমাধা করে। কোন ফলগাছ অন্য ফলগাছ থেকে মহত্তর কিছু নয় কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত সূর্যালোক ও পানিপ্রাপ্তির জন্য অধিক যোগ্য ও নয়। আমাদের ফলগাছ ও ফল উভয়ই দরকার। এজন্যই তোমার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের মাঝে অনেক গুরুত্ব ও গূঢ় উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।    

প্রায়ই সঠিক পথে থাকা লোকেরা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে দোদুল্যমান হয়ে পড়েন। তাদের মনে প্রশ্ন আসে কেন তারা এ সকল কাজ করছে । এটা স্বাভাবিক। যখন অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে এখন আর অন্য কোন পথে যাত্রার উপায় নেই এবং চলতি পথেই যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে, তখন ঐ পথই তার গন্তব্য।  সে অবশেষে সক্রিয় হয়ে উঠবে। কিন্তু এরকম দ্বিধা-সংশয় পর্বের অভিজ্ঞতা ও জরুরি এবং স্বাভাবিক। এটাকে অলসতা ভাবার কিছু নেই। তুমি কেন নির্দিষ্টভাবে এ পথই বেছে নিয়েছ নিজেকে এরকম প্রশ্ন করার মাধ্যমে এবং জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে পুনঃ বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে তুমি তোমার দ্বিধা-দোদুল্যমানতা কাটিয়ে উঠতে পার।   

 

দ্বিধা কেটে যাওয়ার পরও যদি তোমার হাফেজ হওয়া এবং একাডেমিক শিক্ষার পথ ধরে কোন পেশায় যোগ দেয়ার আগ্রহ বজায় থাকে তবে নিঃসন্দেহে তুমি তোমার পরিকল্পিত রুটিন কাজগুলো করতে আগ্রহ-উদ্দীপনা খুঁজে পাবে। যে কাজগুলো তোমার বড় লক্ষ্যের পথে যাত্রার প্রক্রিয়া, তোমার হৃদয়-মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। এ পরামর্শগুলো কাজে এলে আমাকে জানাবে আর বিস্তারিত জানতে চাইলে দয়া করে আমাকে লিখবে। সালাম।  


উৎস

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।