Questioner
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
Question

আমার অলস মেয়েটিকে কিভাবে মোটিভেট করব? একটা শিশুকে ঠিক কতটুকু চাপ প্রয়োগ করা উচিত এমন কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যা সে করতে চায়না। আমার একটি ১২ বছরের মেয়ে আছে । সে সবসময় শখের বশে  কোন একটা কাজ শুরু করে , কিন্তু সহজেই সে কাজটি সম্পর্কে মনযোগ হারিয়ে ফেলে। আসলে ,সে সবকিছুর ব্যাপারে অমনযোগী , সব কিছুর ব্যাপারে বিরক্ত ও উদাসীন। পড়াশোনার ব্যাপারে খুব অলস। সকালবেলায় তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা অনেক কঠিন। ঘরের টুকিটাকি কাজে সে আমাকে কোন প্রকার সাহায্যই করতে চায়না। আমি জানিনা, তার ব্যাপারে কি করব। পরামর্শ চাই।

Counselor
পরামর্শদাতা: আয়েশা মাহমুদ সোয়ান; অনুবাদ: মোল্লা ফারদিদ
Answer

আমাদের কাছে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বারো বছর বয়সী মেয়েটি এ বয়সী একটি মেয়েশিশুর স্বাভাবিক আচরণই করছে। বয়ঃসন্ধি-পূর্ব এ সময়টিতে তার হরমোনগুলি সক্রিয়। তাই, তার শারীরিক পরিবর্তন ঘটছে। তার মানসিক আবেগ ও মেজাজ  নিজের সম্পর্কে ধারণাগুলি ও পরিবর্তিত হচ্ছে। তার আচার-আচরন হয়ত এসব বিবিধ কারণে কিংবা অন্যান্য বহিঃস্থ বিষয়াবলির প্রভাবে পরিবর্তিত হওয়ায় তার আগ্রহ এবং মোটিভেশনের জায়গাটি  ও প্রভাবিত হয়েছে।

এ বয়সের শিশুরা প্রায়শই এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের অভাব কিংবা কম আত্ম-সম্মানবোধে ভুগে থাকে। তারা প্রায়ই নিরুৎসাহিত, রাগান্বিত কিংবা উদ্বিগ্ন অবস্থায় থাকে। এ বিষয়গুলোর প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন কাজে- যেমন, কোন কাজ অসমাপ্ত ফেলে রাখা , অমনযোগী হওয়ার ভান করে পড়াশুনা করতে না চাওয়া , অবাধ্যতা দেখানো ইত্যাদি। আপনার মেয়ের আবেগ-অনুভূতির জায়গাগুলো খুঁজে বের করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, যখন সে কোন কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রাখে, জানতে চেষ্টা করুন কেন সে এরূপ করছে। তাকে বলুন যে, এ পর্যন্ত করা তার করা দারুন কাজটির কারণে আপনি তাকে নিয়ে গর্বিত এবং আপনি জানতে চান কেন সে কাজটি করা থামিয়ে দিয়েছে। স্বভাবত, শিশুরা কোন কাজ করা ছেড়ে দেয় যখন সে বাস্তবিকই সে কাজটিতে আর উৎসাহ বোধ করছেনা , কিংবা সে হতাশা এবং আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়েছে। তার সমস্যাটি সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল তার এরকম হতাশা এবং আত্মবিশ্বাসহীনতার উৎস খুজে বের করা। অনেক মনস্তাত্ত্বিকই মনে করেন যে আসলে কোন শিশুই ‘অলস’ হতে পারেনা।

কতিপয় শিশু আছে , যারা কোন কাজের চেষ্টা করার পর  ব্যর্থতা কিংবা মনোবলহীনতা অনুভব করে  এবং সে কাজ করা অসম্ভব মনে করে হাল ছেড়ে দেয়। আবার, কতিপয় শিশু আছে ,যারা হয়ত গণিত অনুশীলন কিংবা ভাষা অধ্যয়ন করবেনা, কিন্তু ঠিকই animal planet অথবা Discovery  চ্যানেল দেখবে। আপনার পছন্দের  সাথে না মিললেও শিশুদের পছন্দ এর জায়গাটি খুঁজে বের করা এবং তাদের পছন্দের বিষয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করার সাথে সাথে তাদের মন থেকে অক্ষমতার অনুভূতি দূর করা মোটিভেশনের সমস্যাটি সমাধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটা করা যায়, তাদের পছন্দের বিষয়ে যে আপনার আগ্রহ এবং উৎসাহ রয়েছে তা প্রকাশের মাধ্যমে এবং তাদের হতাশা কিংবা আত্মবিশ্বাসহীনতার উৎস খুঁজে বের করে তা মেনে নেয়ার মাধ্যমে। তার সকল চেষ্টা এবং উন্নতিকে স্বীকার করুন, তাকে উতসাহিত করুন, তার সক্ষমতার দিকগুলোতে নজর দিন এবং তাকে সময় দিন। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হল , মোটিভেশনের ব্যাপারে আপনি একটা ভিন্ন পন্থা অনুসরন করবেন। তার আবেগ-অনুভূতি ,স্কুল কিংবা যেকোন সামাজিক চক্রগুলোতে তার অভিজ্ঞতা আপনার সাথে শেয়ার করতে তাকে উৎসাহিত করতে হবে , যাতে সে যেসব সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে যেমন অব্যাহত বাজে আচরণ কিংবা  টিজিং এর শিকার হওয়া ইত্যাদি সমাধা করা যায়। তার আবেগ- অনুভূতিগুলো ততক্ষনাত বিচার করা থেকে আপনাকে  বিরত থাকতে হবে এবং তার আবেগ-অনুভুতিকে সহায়তার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। বর্তমানে মনোবিজ্ঞানের কথা হলো- মোটিভেশনের সমস্যা সমাধান দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার ।

কারণ, মনোবলহীনতা ও তৈরি হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। তাই, আপনার শিশুর শিখতে সময় লাগবে , কিভাবে তার নিরাশা এবং আত্ম-সংশয়ের মনোভাব কাটিয়ে উঠতে হয় এবং হতাশা ও অবাধ্যতার মনোভাব মন থেকে দূর করতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তার মন হতাশায় ভরে গেছে এবং সে নিরাশা-মনোবলহীনতার ঘেরাটোপে আটকে গেছে। তার মনোবলহীনতা যতটা প্রসারিত কিংবা গভীর হয়েছে , তার নিরাশা এবং অবাধ্যতার মনোভাব ততই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে আর , এ প্রবণতাগুলো কাটিয়ে উঠতে তার অনেক সময় লাগবে। বোন, আপনি যা লিখেছেন, তা অনুসারে আপনার মেয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করব এবং সমস্যার গোড়ায় পৌছাবার চেষ্টা করব।আপনার কথায় মনে হয়না যে সে অলস অথবা মোটিভেটেড না।বরং সে হয়ত অসহায়তা অনুভব করছে। তার  পরিবর্তনশীল শরীর ও মানসিক আবেগ নিয়ে হয়ত সে চিন্তাক্লিষ্ট। তার হয়ত আত্ম-সম্মানবোধের কমতি রয়েছে যা তার মনোবলহীনতার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে অথবা  তার স্কুলেই কোন সমস্যা ঘটেছে। দয়া করে সমস্যাগুলো খুজে বের করুন। যদি  এরকম চেষ্টাতে কাজ না হয় এবং তার আচরণ আরো খারাপের দিকে যায় তাহলে তার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন তার বিষাদগ্রস্ততা(depression) পরীক্ষা করানোর জন্য।

আবারো বলছি, এরূপ আচরণ কিশোর এবং কৈশোর-পূর্ব সময়ে শিশুদের মাঝে প্রায়ই দেখা যায় এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে এগুলো সমাধাও করা যায়। তবে আপনার অধিক সংশয় জাগলে তাকে কাউন্সেলিং এর  জন্য কাউন্সেলর দেখান। আপনার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করছি। আয়েশা মোহাম্মদ সোয়ান ২০০০ সালে  সাইকোলজিতে পিএইচডি অর্জন করেছেন । নিউইয়র্কের জেনেভা বি স্ক্রগস কম্যুনিটি হেলথ সেন্টারে ১২ বছর ধরে কাউন্সেলর এবং সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন।

-------------------------------------------
সুত্রঃ http://aboutislam.net/counseling/ask-about-parenting/raising-positive-children/motivate-lazy-daughter/

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।