প্রতিকুলতা পূর্ণ শৈশব কি সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়?
আপনি প্রশ্ন করেছেন,
অনেকে মনে করেন , যে শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে, বা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠে, অথবা যে কোন ধরনের শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহন করে তারা তুলনামুলক ভাবে বেশী পরিশ্রমী, কর্মঠ হয় ও জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে এবং অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা সন্তানদের তুলনায় এই শিশুরা বিশেষ যত্ন ও শিক্ষা দীক্ষার সুবিধা পেয়ে থাকে এ কারনেই কি তাদের জন্য সফল হওয়া টা সহজ হয়?
উত্তর:
আস-সালামু আলাইকুম,
সাধারনত যে শিশুরা খুব অল্প পেয়ে বড় হয় তারা পরবর্তী জীবনে যা পায় তার প্রশংসা করতে শেখে।
প্রতিকুলতা পূর্ণ শৈশব নিয়ে যারা জন্মগ্রহণ করেন, তাদের গঠনমূলক ভাবে বেড়ে ওঠা না ওঠা অনেকটা নির্ভর করে কয়েকটা বিষয়ের ওপর । কারন গুলো ব্যক্তি এবং তাদের পারিপার্শ্বিক কিছু পরিস্থিতির সাথেও সম্পর্কযুক্ত। যেমন পিতামাতার সাথে তাদের সম্পর্ক, ব্যক্তি- নিজে, তাদের চিন্তাভাবনা, শিক্ষাদীক্ষা ও তার প্রতি অন্যদের আচার আচরন ,তার মানসিক বিকাশের ধরন ও চর্চা ,পরিবেশগত কারন ইত্যাদি।
আমি আমার খুব কাছের দু'জন লোককে চিনি যারা স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠেছে কোনরকম চ্যলেঞ্জ ছাড়া । যারা খুব ভালবাসা ও যত্নের সাথে লালন-পালন হয়েছে, এবং তারা পরবর্তী জীবনে যা অর্জন করেছে তার যথার্থ মূল্যায়নও তারা করেছে । তাদের এই অভিব্যক্তি প্রশংসনীয়।
এবার আসি চ্যালেঞ্জিং শৈশবের মানুষদের কথায়ঃ
অপরদিকে যারা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক বা মানসিক ত্রুটি বা সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তাদের জন্যও আমি মনে করি বিষয়টি অনেকটা একইরকম । তাদেরও গঠনমূলক ভাবে বেড়ে ওঠা না ওঠা অনেকগুলো নিয়ামকের উপর নির্ভর করে, যেমন- ব্যক্তি নিজে, তাদের চর্চা, শিক্ষা দীক্ষা, ,গঠন করার ধরন এবং পরিবেশগত কিছু কারন ইত্যাদি।
তারা কিভাবে বড় হচ্ছে? তারা কি নিজেদের বাস্তবতার জন্য দুঃখিত ও হীনমন্য হয়ে লালিত পালিত হচ্ছে নাকি এই বিশ্বাস দিয়ে তাদের দিক্ষা দেয়া হচ্ছে যে- যে অবস্থাতেই সে থাকুক শুধু মাত্র কঠোর পরিশ্রম , লক্ষ্য নির্ধারণ আর আন্তরিক প্রচেষ্টা দ্বারা মানুষ যা চায় তাই অর্জন করে নিতে পারবে।
অতএব এটা কখনই একটা সহজ ও সার্বজনীন নিয়ম নয় যে উপরোক্ত ২ টি ধরনের মতই সব শিশুর বেড়ে ওঠা হবেই। কারন, মানুষ কে আল্লাহ যেভাবেই সৃষ্টি করুক না কেন- মানুষের চিন্তাপ্রকৃতি ও অস্তিত্ব যতটা শিল্প ততটাই বিজ্ঞান।
প্রত্যেক টি সন্তানদের ক্ষেত্রে এমন কিছু বিশেষ নিয়ামক থাকতে পারে যা তার বেড়ে ওঠার ও সফল হওয়ার জন্য ভুমিকা রাখতে পারে। তাই সব রকম মানুষকে ঢালাও ভাবে এরকম দুয়েকটি ধরনের মধ্যে বিচার না করে তাদের কে আলাদা ভাবে বুঝতে ও জানতে চেষ্টা করা , তাদের জীবনের গল্প সম্পর্কে অনুধাবন করতে চেষ্টা করা উচিত। যেমন - তাদের লালন-পালন, অনুপ্রেরণা, দুর্বলতা, বিশেষ গুন, কষ্ট, ভয়, বিশ্বাস ও চিন্তার ধরন।
মানুষের অস্তিত্বের সবচেয়ে সুন্দর ও অলৌকিক দিকটি হলো - মানবের স্বকীয়তা, নিয়ামত আর দৃষ্টিভঙ্গি । সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সকল বাস্তবতাকে আশীর্বাদ মনে করে স্বতঃস্ফর্ত ভাবে মেনে নিতে হবে। এবং পরিচর্যার মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। সকল সৃষ্টির জীবন গল্পই মহান প্রভুর মহিমা আর পবিত্রতার প্রকাশ।
তাই এই নিয়ামত টাকে যেভাবে আল্লাহ দিয়েছেন সেভাবেই গ্রহণ করা উচিত। সাধারন কিছু ভাগে এক এক ধরনের মানুষকে বিবেচনা করে বা কম বেশি প্রাপ্তির বৈষম্যমুলক
তুলনা করলে তা আল্লাহ প্রদত্ত সৃজনশীল প্রতিভাকে ক্ষুন্ন করা হয়।
ইসলাম অর্থাৎ আমাদের জীবন বিধান কখনোই এটা সমর্থন করে না যে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত কে কারন হিসেবে ব্যাখ্যা করে মানুষের বিভিন্ন বাস্তবতা নিয়ে এরকম ধারনা ও মন্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। যদি আমরা সবাই এটা করে থাকি তাহলে আমাদের অবশ্যই যথার্থ জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে ।
সালাম।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।