ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানির নোংরা রহস্য: যে অস্ত্র গুলো ফিলিস্তিনিদের উপর পরীক্ষা করা হয়


ইসলামী বার্তা ডেক্স
Published: 2024-03-17 19:47:01 BdST | Updated: 2024-04-29 02:39:08 BdST

আমরা কিছু সংবাদ মাধ্যমের এই নিউজ সমূহ পর্যালোচনা করবো। সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে (১) ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানির নোংরা রহস্য: সে অস্ত্র গুলো ফিলিস্তিনিদের উপর পরীক্ষা করা হয়। আম্মান, জর্ডানের আম্মান থেকে প্যাডি ডাউলিং আল জাজিরায় প্রতিবেদন করে। এতে বলা হয় ইসরায়েলের প্রতিটি যুদ্ধে পরীক্ষিত অস্ত্রের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়েছে। আর গাজা হচ্ছে তার অস্ত্র শিল্পের পরীক্ষাগার।  (২)  আনাদোলু এজেন্সিতে লীলা নেজিরেভিচ প্রতিবেদন করেন যে, ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী বিক্রির জন্য গাজায় নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করছে, এআইয়ের সাথে 'স্বয়ংক্রিয় হত্যার' নীলনকশা তৈরি করছে: বিশেষজ্ঞ। অস্ট্রেলিয়ান-জার্মান ইহুদি লেখক অ্যান্টনি লোয়েনস্টেইন বলেছেন, বিশ্বজুড়ে জাতিগুলি ফিলিস্তিনের ইসরায়েলি দখলকে সমর্থন করে কারণ এটি তাদের 'যুদ্ধ-পরীক্ষিত' অস্ত্র কেনার অনুমতি দেয়। (৩) জোনাথন কুক লিখেছেন গাজা কি পরীক্ষামূলক অস্ত্র পরীক্ষাকরার জায়গা? (৪) শির হেভার এর নিবন্ধ গাজা: ইসরায়েলি সামরিক প্রযুক্তির জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র। যেখানে তিনি বলেন গাজা স্ট্রিপের প্রতি ইসরায়েলের নীতিতে অস্ত্র শিল্পের বাণিজ্যিক বিবেচনা একটি মূল ভূমিকা পালন করে। (৫) ম্যাট কেনার্ড এর নিবন্ধ ইসরায়েলের অস্ত্র শিল্পের নিষ্ঠুর পরীক্ষা (৬) ক্রিস হেজেস এর আর্টিকেল ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইল যে অস্ত্র পরীক্ষা করে তা আমাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। অ্যান্টনি লোয়েনস্টেইন ব্যাখ্যা করেছেন, ফিলিস্তিন গোয়েন্দা সফ্টওয়্যার থেকে হত্যাকারী ড্রোন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা নিপীড়নমূলক প্রযুক্তির জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়েছে। (৭) স্যাম রাসেক এর প্রতিবেদন ইসরায়েল বিশ্বের স্বৈরশাসকদের অস্ত্র দেয়, তার আগে তা ফিলিস্তিনিদের ওপর সেই অস্ত্র পরীক্ষা করে। "প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি" রূপরেখা দেয় যে কিভাবে ইসরাইল তার "যুদ্ধ-পরীক্ষিত", "ক্ষেত্র-প্রমাণিত" অস্ত্র এবং স্পাইওয়্যারগুলি কার্যত যে কারো কাছে বিক্রি করে, তা যতই নৃশংস হোক না কেন। (৮) আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ইসরায়েলি অস্ত্র নির্মাতাদের জন্য, গাজা একটি নগদ গরু। মানে এমন গরু যাকে যখন তখন কোরবানী করা যায়। যুদ্ধের সময় তাদের কারখানাগুলি চব্বিশ ঘন্টা যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে কাজ করেছিল কারণ সেনাবাহিনী তাদের নতুন সিস্টেমগুলি শিকারদের উপর পরীক্ষা করেছিল। এখন, তারা আশা করছে তাদের যুদ্ধ-পরীক্ষিত পণ্য তাদের নতুন গ্রাহকদের থেকে বেশি মূল্য পেতে সাহায্য করবে। (৯) ক্রিস মাদা লিখেন  ফিলিস্তিন ইসরায়েলি সামরিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন যে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে সজ্জিত সামরিক প্রযুক্তি পরীক্ষা করার জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনকে একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার হয় ফিলিস্তিনিরা। (১০) ইয়াভুজ আইদিন লিখেন ইসরায়েল গাজায় ব্যবহার করে তার বিমান, নৌ ব্যবস্থায় এআই সফ্টওয়্যার দ্বারা চালিত অস্ত্র পরীক্ষা করছে। ইসরায়েলি বাহিনী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা সমর্থিত অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে যাতে গাজা উপত্যকায় তাদের আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু নির্ভুলতা বজায় রেখে হতাহতের সংখ্যা বাড়ানো যায় (১১) রিলিফ ওয়েভের প্রতিবেদন জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহার: ফিলিস্তিন দ্বারা জাতিসংঘের একটি ব্রিফিং বোমাবর্ষণের অধীনে গাজার ভয়াবহ বাস্তবতার রূপরেখা দেয়। (১২) ইসরায়েল গাজায় ব্যবহার করছে এমন অস্ত্র আগে কখনো দেখা যায়নি। 

এসব প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসরায়েল তাদের যখনই অস্ত্র পরীক্ষার সময় হয় তারা হামলা করে। সেটা রমযান মাস হলেও তারা অপেক্ষা করেনা। একটি অজুহাত তৈরী করে মাত্র। মনে করা হয় হামাস এই করেছে তা পশ্চিম তীরের কোন কিশোর ঢিল ছুড়েছে। আসলে তারা বছরের প্রতিটি সময়ই তারা ফিলিস্তিদের ঘরবাড়ী দখল করে। আর ফিলিস্তিনিরা কিছুটা প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর এর প্রতিক্রিয়ার ফল স্বরূপ তারা তখনই হামলা করে যখন তাদের অস্ত্র বিক্রির জন্য প্রস্তুত। তার মাঝে সকল আক্রমন ও প্রতি আক্রমনের বল সব সময় তাদের কোর্টে থাকে। 

যখনই তার অস্ত্রের একটি চালান বানানো শেষ এবং সে এগুলো পরীক্ষা করে বিশ্ববাজারে দেখাতে চায় তখনই সে একটি অজুহাত তৈরী করে। থাকে মনে হচ্ছে সে তার নিরাপত্তা নিয়ে খুব চিন্তিত। তারপর সে আক্রমন শুরু করে নতুন অস্ত্র দিয়ে। সেটা রমাদান মাস হোক বা শুক্রবার হোক সে বিষয় তাদের খেয়াল থাকেনা। তারা শুধু জানে তাদের নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করে তার ভিডিও ধারন করে ক্লায়েন্টকে দেখাতে হবে। যাতে তারা সর্বোচ্চ মূল্য পেতে পারে। 

২০১৪ সালে তারা মসজিদে অস্ত্র আছে এমন অজুহাত তোলে হঠাৎ 

২০১৪ সালে রামাদানে এবং ঈদ উল ফিতরের সময় গাজায় ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা মুসলিমদেরকে নিরাপদে নামাজ আদায় করার জন্য গির্জা খুলে দেয় এবং সাদরে স্বাগত জানায়। কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল যে মসজিদ সমূহে ইসরায়েল হামলা করবে। যেমনটা তারা যুদ্ধের শুরু থেকেই করেছিল। কারণ ইসরায়েল দাবি করেছিল যে মসজিদকে অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।  সেসময় ৫৩ দিনের দীর্ঘ যুদ্ধে গাজায় প্রায় ২২০০ জন মারা যায়, ১০ হাজার জনের বেশি আহত হয় এবং ১০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়। তখন মনে করা হত যে রামাদানের সময় গাজায় হামলা করবে কিনা তা নিয়ে ইসরায়েল দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে। রামাদানের তৃতীয় দিনে সর্বশেষ হামলার পর তারা গাজার ফিশিং জোন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। জেলেরা বা অন্যান্য বেসামরিক ব্যক্তিরা রামাদান মাসে ইসরায়েলের কি ক্ষতি করতে পারে তা কারো বোধগম্য নয়।

শিশু হিন্দ রজব হত্যা বা ত্রাণের সারিতে হামলা শুধুমাত্র আরো উস্কে দেওয়া জন্য

২৯শে ফেব্রুয়ারী গাজায় খাদ্য সহায়তার অপেক্ষায় থাকা সারিতে বোমা হামলায় ১১২জন নাগরিককে হত্যা করা হয়। এতে আহত হয়েছে ৭৫০ জনেরও বেশি। গত মাসে ৬ বছর বয়সী শিশু হিন্দ রজব হত্যায় বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠে। যে শিশুটি ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) জরুরি নম্বরে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল। সাথে তার পরিবারের লোকজন এবং উদ্ধার করতে আসা রেডক্রস কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়, যদিও ইসরাইল তা অস্বীকার করছে, কিন্তু আলজাজিরার অনুসন্ধানে এটা প্রমাণিত হয়েছে। হসপিটালে বোমা হামলা, ত্রাণ নেয়া মানুষের সারিতে হত্যাযজ্ঞ, শিশু হত্যা  সহ নিরীহ মানুষদের উপর এধরনের বর্বর হামলা ক্রমশই বিশ্ববাসীর সামনে এটা স্পষ্ট করছে যে তার জিম্মি উদ্ধার বা হামাসের সাথে যুদ্ধ করছেনা, তারা ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মুলের জন্য গণহত্যায় নেমেছে। 

কেন ইসরায়েল গাজা বাসীদেরকে চারদিক থেকে আবদ্ধ করে রেখেছে

এই প্রশ্নটি কি আমাদের মনে কখনও জাগেনা। সে চাইলে বোমা মারতে শুরু করবে আর মানুষ উদ্ধাস্তু হলে পালাবে অন্য দেশে। আর সে গাজা দখল করে নিবে। আর তার যে শক্তি গাজা দখল করা তার জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু কেন সে তা দখল করেনা?

কিন্তু গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলি স্থল, আকাশ ও সমুদ্র অবরোধের অধীনে মাত্র ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার (১৩৯ বর্গ মাইল) এলাকায় আটকা পড়ে আছে। হামলার কারণে গাজায় ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়ার কোনো নিরাপদ জায়গাও নেই।

ইসরায়েল কখনো চায়না তারা চলে যাক, কারণ চলে গেলে বা পুরো খালি হয়ে গেলে তাদের ট্রিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা বন্ধ হবে যাবে। যেটা দিয়ে তারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের শাসক গোষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

যে গরু দুধ দেয় তাকে কেউ বিক্রি করে না। গাজা হচ্ছে দুধ দেওয়া গাই। বাড়ীর মালিক ভাড়াটিয়াদের সাথে খুব আন্তরিক ব্যবহার করে, এজন্য নয় যে সে তাদেরকে খুব ভালবাসে। বরং ভাড়াটিয়ারা সব চলে গেলে বাড়ীর মালিকের আয় বন্ধ হয়ে যাবে  সে পথে বসবে। এজন্য ইসরায়েল তাদেরকে চারদিক থেকে আবদ্ধ করে রেখেছে যাতে তারা কোথাও চলে যেতে না পারে। তবে পার্থক্য হচ্ছে বাড়ির মালিকের আয়ের পদ্ধতি ভাড়াটেদেরকে সেবা দেওয়া। ইসরায়েলের আয়ের পদ্ধতি হচ্ছে এদের উপর প্রয়োজন হলে অস্ত্র পরীক্ষা করা । এমনও নয় যে এরা আরব মুসলমানদেরকে মানুষ মনে করেনা। বরং বহু আরবদের সাথে এদের সখ্য। বহু আরবদের হেরেমে ইহুদী নারী রক্ষিতা হিসাবে পাঠিয়ে দেয়। বরং তারা যে গাজা বাসীদের বিষয়ে বর্ণবাদ ছড়ায় তার মূল কারণ হচ্ছে অস্ত্র বাণিজ্য। এজন্য তারা বোকা ইহুদী আলেমদেরকে ব্যবহার করে। যে ইহুদী রাব্বী যত বেশি হিংসা ঘৃনা ও বর্ণবাদ ছড়াতে পারে তাতে তত বেশি সুবিধা দেওয়া হয়।

আবার এমনও নয় যে চীন রাশিয়া মুসলিমদের বা ফিলিস্তিনের বন্ধু। কারণ তারা মুসলিমদের জন্য হিতাকাঙ্খী হলে, উইঘুরদের উপর অমানবিক নির্যাতন করতোনা। যারা শুধু মাত্র যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের ক্ষমতা কমাতে চায় নিজেদের শক্তির প্রভাব ও প্রয়োগ করতে। লক্ষ্যণীয় যে উইঘুরদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মায়া কান্নার শেষ নেই।

ইসরায়েল গাজা বাসীদেরকে গাজা থেকে দূরে কোথাও যেতে দেবেনা। মাঝে মাঝে তারা এমন ভাব ধরে যেন তাদেরকে মিশর পাঠাতে পারলে তারা খুশি। এটা হচ্ছে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করা প্রয়াস। তারা যেন মূল সত্য বুঝতে না পারে। পাশ্ববর্তী যেসব আরব স্বৈরশাসক মিশর, সৌদি আরব, জর্ডান ও সিরিয়াতে ক্ষমতায় আছে এদের সাথে ইসরায়েলী লবীর  খুবই আন্তরিক সম্পর্ক বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। সুতরাং তারা কিছুতেই গাজাবাসীদেরকে গাজার এই আবদ্ধ বন্দীশালা হতে বের হতে দেবেনা।

দ্যা ওয়ার গেম

ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম প্রধান অস্ত্র নির্মাতা ও সরবরাহকারী। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি অস্ত্রের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ে। তাঁরা বলছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলা দেশটির নতুন অস্ত্রের পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে।

২০১৪ সালে ইসরায়েলি স্পাইক ড্রোনের বিক্রি যেভাবে বাড়ানো হয়

২০১৪ সালে গাজার রাফাহ এলাকায় ট্যাক্সি চালাচ্ছিলেন আহমেদ সায়েদ আল-নাজার (২৮)। অকস্মাৎ একটি ড্রোন তাঁর গাড়িতে বিস্ফোরিত হয়। নাজার প্রাণে বাঁচলেও তাঁর বন্ধুসহ গাড়িতে থাকা ছয়জন নিহত হয়। গাজায় কর্মরত নরওয়ের চিকিৎসক এরিক ফোস জানান, ইসরায়েলি স্পাইক ড্রোন রকেট দিয়ে গাড়িটিতে হামলা করা হয়েছিল। আশপাশের ২০ মিটার এলাকায় এর হামলার প্রভাব পড়তে পারে। এই ঘটনার ফলস্বরূপ ২০১৪ সালের মধ্যে নাগাদ স্পাইক রকেটবাহী ড্রোনগুলো বিভিন্ন দেশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

২০০৭ এ হেরোন ড্রোন বিক্রি বৃদ্ধির কৌশল

২০০৭ সালে ‘দ্য হেরোন টিপি এইতান’ নামের বৃহত্তম ড্রোন বহরে যুক্ত করে ইসরায়েল। এটি চারটি স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্রসহ টানা ৪০ ঘণ্টা উড়তে পারে। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই) দেশটির বৃহত্তম মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সংস্থা এবং বৃহত্তম শিল্প রপ্তানিকারক। বেসরকারি সংস্থা ড্রোন ওয়ারস ইউকে জানিয়েছে, এই ড্রোনটি সর্বপ্রথম ২০০৮-০৯ সালের দিকে গাজার যুদ্ধে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলায় ব্যবহৃত হয়। ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ওই ড্রোন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ১১৬ জন নিহত হয়। যুদ্ধের পর ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে অন্তত ১০টি দেশের মধ্যে ওই ড্রোন কেনার প্রবণতা দেখা দেয়। এই সময়ের মধ্যে শতাধিক ইসরায়েলি ড্রোন ক্রয় বা ইজারা নেওয়া হয়। ড্রোন ওয়ারস ইউকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সমরাস্ত্রের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা ভারত এই সময়ের মধ্যে ৩৪টি হেরোন ড্রোন কেনে। এ ছাড়া ফ্রান্স ২৪টি, ব্রাজিল ১৪টি ও অস্ট্রেলিয়া কেনে ১০টি ড্রোন। বর্তমানে ভারত ইসরায়েলের তৈরি শতাধিক মনুষ্যবিহীন আকাশযান পরিচালনা করছে।

মর্টার বোমা আয়রন স্টিং বিজ্ঞাপন

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গত ২২ অক্টোবর প্রকাশিত এক ভিডিওতে তাদের মাগলান কমান্ডো ইউনিটকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম মর্টার বোমা আয়রন স্টিং ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ২০২১ সালের মার্চে বোমাটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে নিজেদের ওয়েবসাইটে এর গুণাবলির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে বোমাটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইলবিত সিস্টেমস।

প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৮৩ টনের বেশি বিস্ফোরকের ব্যবহার

ইসরায়েল প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির আবাসস্থলে আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বোমাবর্ষণ করছে। ফিলিস্তিনি সূত্রমতে, ইসরায়েল গজা হামলায় ৬৬ হাজার টনেরও বেশি বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। যা প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে প্রায় ১৮৩ টন। এই আগ্রাসনে ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি অস্ত্র

বিশ্বের দশম বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক ইসরায়েল আনুমানিক ১৩০টি দেশের কাছে সমরাস্ত্র, ড্রোন, সাইবার নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করে। ২০১৭ সালে ইসরায়েল ছিল বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক ড্রোন রপ্তানিকারক দেশ। ধারণা করা হয়, গত তিন দশকে মোট মনুষ্যবিহীন আকাশযানের দুই-তৃতীয়াংশই রপ্তানি করেছে ইসরায়েল।গাজাভিত্তিক আল মিজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’-এ ব্যাপক পরিসরে ‘হারমেস ৪৫০’ ও ‘হারমেস ৯০০’ ড্রোন ব্যবহার করা হয়। মোট প্রাণহানির ৩৭ শতাংশই হয় ড্রোন হামলায়। পরবর্তী সময়ে নতুন ‘হারমেস ৯০০’ ড্রোনের জন্য ২০টির বেশি দেশের সঙ্গে চুক্তি করে ইলবিত কম্পানি। চলতি বছরের মার্চে ‘হেরমেস ৯০০’ ড্রোনের জন্য ১২০তম অর্ডারের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

যুদ্ধের পর বাড়ে বিক্রি

দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরির লেখক ও স্বাধীন সাংবাদিক অ্যান্টনি লোয়েনস্টাইন বলেন, গাজায় প্রতিটি যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যেসব অস্ত্র ও নজরদারি প্রযুক্তি ইসরায়েল ব্যবহার করেছে, পরবর্তী সময়ে সেগুলোর বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রি করা হয়।

যে কারণে গাজা ইসরায়েলি অস্ত্রের ‘পরীক্ষাগার

গাজায় নারকীয় আগ্রাসনে ইসরায়েল কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে, তার একটি নমুনা প্রকাশ করতে গত ২২ অক্টোবর একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ইসরায়েলের ‘ম্যাগলান কমান্ডো ইউনিট’ একটি বিশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন মর্টার গোলা ব্যবহার করে যার নাম ‘আয়রন স্টিং। গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যবহার করা এই আয়রন স্টিং অস্ত্র ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয় খুব বেশি দিন আগে নয়। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘এলবিট সিস্টেমস’ ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে কাজে যুক্ত হওয়ার আগে ২০২১ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের জনসংযোগ পাতায় অস্ত্রটির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সারা বিশ্বে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বাণিজ্যে তালিকায় নাম রয়েছে ইসরায়েলের। ইসরায়েলের ইহুদিবাদী প্রশাসন সর্বাধুনিক ও মারণঘাতী অস্ত্রগুলো প্রায়ই ফিলিস্তিনের ওপর ব্যবহার করে। ব্যাপারটি অনেকটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ফিলিস্তিনিদের ওপর মারণঘাতী অস্ত্রে সফল ব্যবহার হলে তার চাহিদা বহির্বিশ্বে বেড়ে যায়। সফল পরীক্ষার পর অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বের বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি বইয়ের লেখক অ্যান্টনি লোওয়েনস্টেইন বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গাজায় প্রতিটি যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব অস্ত্র ও নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে সেগুলো পরে বাজারজাত হয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক বিক্রি হয়েছে। 

স্বার্থ ভোগীরা সামনে মানবতার জয়গান গায় পেছনে যাবতীয় ইন্দন দেয়

নির্বিচারে বেসামরিক লোকের হত্যা, পঙ্গুত্ব ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পশ্চিমা দেশগুলির কোন উদ্বেগ দেখা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মান্দেব প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাওয়া বাণিজ্যিক জাহাজ সমূহের ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের দ্বারা বেশ কয়েকটি অ-মারাত্মক আক্রমণ এই পশ্চিমা দেশগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। এবং তাদের কৃত্রিম মুখোশ বিশ্ববাসীর সামনে খুলে দেয়। তাদের বানানো গণহত্যা কনভেনশন তারাই লংঘন করে। তারাই রায় দেয় তারায় রায় অমান্য করে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুথি বাহিনীর দ্বারা সৃষ্ট বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকির কথা উল্লেখ করে কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণে "অপারেশন গার্ডিয়ান অফ ওয়েলফেয়ার" নামে একটি বহুজাতিক "মেরিটাইম টাস্ক ফোর্স" গঠনের ঘোষণা দেয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডের ১১ জানুয়ারী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ লোহিত সাগরে হুথি হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান দ্বারা উপস্থাপিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

ড. রামজি বারুদ যথার্থ বলেছেন, যখন সব বলা হবে এবং করা হবে, তখন ভয়ঙ্কর সংখ্যক ফিলিস্তিনি শিকারের রক্ত তেল আবিব, ব্রাসেলস, লন্ডন, সিডনি এবং অন্যান্য সকল গণহত্যা ক্ষমাকারীদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে। এই মাত্রার একটি অপরাধ কখনও ভুলে যাওয়া সম্ভব হবে না এবং ক্ষমা করা হবে না।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম বিশ্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কিয়ের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাং...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-05-23 09:44:54

১৯৯৫ সালে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-15 19:48:15

সুদান ভেঙ্গে আবারও নতুন দেশের উদয় হবে বলে ইসরাইল আশা করছে

মুসলিম বিশ্ব | 2023-04-29 02:07:05

২৮ জুন স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিশ্বব...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-01 04:57:28

রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদাতা Sberbank-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গনিয...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-14 03:30:52

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৩ সালকে একটি একটি কঠিন অর্থনৈতিক বছর...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-13 23:28:54

রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ন...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-08-30 12:58:03