যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েল বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভ
ইসলামী বার্তা ডেক্স
Published: 2024-04-28 00:22:02 BdST | Updated: 2024-05-14 11:52:31 BdST
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৪টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও বিক্ষোভ বাড়ছে। ইউরোপের রাস্তায় বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ ক্রমান্বয়ে ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো, ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২৬ এপ্রিল ২০২৪ গাজার উপর চলমান ইসরায়েলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে, এতে ইহুদী শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়।
এই আন্দোলনে যোগদানকারী সর্বশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হল নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি (CUNY), যেখানে শত শত শিক্ষার্থী "বর্ণবাদে আর বিনিয়োগ নয়" এর মত অনেক স্লোগান ও ব্যানার সহ ক্যাম্পাসে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। CUNY বিক্ষোভের একজন ছাত্র সংগঠক গ্যাবি আওসি আল জাজিরাকে বলেন, "তরুণরা সত্যিই দেখাতে শুরু করেছে এবং দাবি করছে যে স্কুলগুলিকে ইসরায়েলি উপনিবেশের সাথে তাদের সম্পর্কের জন্য দায়বদ্ধ করা হবে।
এমোরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপককে গ্রেফতারে নিন্দার ঝড়
জর্জিয়ার আটালান্টায় এমোরি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলাইন ফোলিনকে মাটিতে চেপে ধরে গ্রেফতার করছে পুলিশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করেছে এবং অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ সহিংসভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করছে। এমনকি ফ্যাকাল্টি সদস্যদেরকেও জোর করে গ্রেফতার করছে।
জর্জিয়ার আটালান্টার এমোরি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। সেখানে এক নারী অধ্যাপককে গায়ের জোরে মাটিতে ঠেসে ধরে পুলিশের হাতকড়া পরানোর দৃশ্য অনলাইনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সিএনএনের ভিডিওতে দেখা গেছে, এমোরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যারোলাইন ফোলিন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে এক পুলিশ কর্মকর্তা তার ওপর চড়াও হন এবং চোখের পলকেই তাকে মাটিতে চেপে ধরে হাতকড়া পরান। একপর্যায়ে অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে অধ্যাপক ফোলিনকে চেপে ধরে তার বুকের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাত বের করে এনে দুই হাতই পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে দেন। যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের এমন বর্বরতা সর্বত্রই সমালোচিত হচ্ছে।
ইহুদীরাও যুক্ত হচ্ছে বিক্ষোভে
অনেক ইহুদি কর্মী এবং কিছু অর্থোডক্স ইহুদি দল বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। তাদের একজন প্রতিবাদকারী স্যাম কোপ্রাক ক্যাম্পাসের একটি সমাবেশে আল জাজিরাকে বলেন, "হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া একজন শিশু হিসাবে, আমার নিজের লোকেদের এমন কিছু ঘটাতে দেখে আমাকে বিরক্ত করে।
বার্লিন ও প্যারিস : গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অবসান ঘটাও
বার্লিনে বিক্ষোভ কর্মীরা জার্মান সরকারের কাছে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করার দাবিতে পার্লামেন্টের সামনে একটি শিবির স্থাপন করে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিখ্যাত সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটিতে, বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস ভবন অবরোধ করে, অনলাইনে ক্লাস করতে বাধ্য করে।
সুইডেন ও লন্ডনের বিক্ষোভ
শনিবার সুইডেনে সর্বশেষ ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে লোকজনকে "মুক্ত প্যালেস্টাইন" এবং "ইসরায়েল বয়কট" স্লোগানে রাস্তায় মিছিল করতে দেখা গেছে। লন্ডন থেকে রিপোর্টিং আল জাজিরার হ্যারি ফাউসেট বলেছেন, "লোকেরা লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে খুব বড় বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় বিক্ষোভের জন্য সংসদ ভবনের ঠিক বাইরে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে জড়ো হচ্ছে।"
ইহুদী বিদ্বেষ নয়, বর্ণবাদ ও যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভ
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের ডিরেক্টর বেন জামাল বলেন, এসব প্রতিবাদ ইহুদি বিরোধী নয়। ইসরায়েল রাষ্ট্রের বৈধ সমালোচনার সাথে ইহুদি-বিদ্বেষকে মিশ্রিত করার এই কৌশলটি খুবই পরিচিত এবং ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে যারা ওকালতি করছে তাদের নীরব করার জন্য এটি ব্যবহার করে। এই ছাত্ররা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সমর্থনে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একদিকে, তিনি গাজায় যা করতে চান তা করার জন্য আমরা অস্ত্র এবং তহবিল সরবরাহ করছি, অন্যদিকে আমরা গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছি। এই ভণ্ডামিতে ছাত্ররা উদ্বিগ্ন।"
যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। এসব বিক্ষোভে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহবান জানানো হচ্ছে।
বিক্ষাভের সূচনাকারী কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে "গাজা সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের" এর তৃতীয় দিনে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিক্ষোভে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা
যেসব বিশ্ববিদ্যালকে ইহুদি বিদ্বেষের জন্য অভিযুক্ত করা হয় তার মধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গ্রেফতারের ঘটনা বিক্ষোভকে আরো উসকে দেয়। কিন্তু বাস্তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এই কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
১৯৬৮ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে যার ফলে শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আটককৃতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি ইলহান ওমরের কন্যাও রয়েছেন। ইলহান ওমর বিবিসিকে বলেন, বিক্ষোভ শুরু করেছিল হাতে গোনা কিছু শিক্ষার্থী। কিন্তু গ্রেফতারের ঘটনার পর সেটি বেশ দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এই বিক্ষোভ শুরু করেছিল মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থী। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৮ সালের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের পুনরাবৃত্তি করছে। সম্ভবত ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতই পতন ঘনিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: