সুদান যুদ্ধের ৫ম মাস ও অব্যাহত মানবিক সংকট


ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2023-08-30 12:58:03 BdST | Updated: 2024-05-14 11:34:07 BdST

সুদানের সেনাবাহিনী এবং র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস আধাসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে গত এপ্রিলে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তাতে সুদানের কেউই আশা করেনি যে শেষ হওয়ার কোনও স্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াই প্রায় পাঁচ মাস স্থায়ী হবে। যুদ্ধবিরতি বা মানবিক ব্যবস্থাপনার কোন সুযোগও সেখানে নেই।

প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসা সূত্র, মানবাধিকার কর্মী এবং সাহায্য কর্মীরা জানিয়েছেন যে রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ভয়াবহ নৃশংসতা চলছে। এমনকি কয়েক ডজন সাহায্যকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মী নিহত ও আহত হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় জাতিসংঘ ও সাহায্য সংস্থার অফিস লুট করা হয়েছে।

বাস্তুচূতি

দক্ষিণ খার্তুমে ৪৫ বছর বয়সী আব্দুল আজিম আহমেদ যখন গাবরা পাড়ায় তার বাড়ি ছেড়েছিলেন তখন তিনি আশা করেছিলেন যে তার এই বাস্তুচ্যুতি কিছু দিনের মধ্যে শেষ হবে। তিনি বলেন, ২০ এপ্রিল আমি আমার ছোট পরিবারকে নিয়ে কালাক্লায় আমার বর্ধিত পরিবারের বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই কালাক্লায় সংঘর্ষ প্রসারিত হয় এবং মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি বিমান হামলা আশেপাশের এলাকায় আঘাত হানে। তারপর আমি আমার পুরো বর্ধিত পরিবারের সাথে খার্তুম ছেড়ে আলজাজিরা রাজ্যে স্থানান্তরিত হই। আলজাজিরার মেদানি শহরে প্রায় দুই মাস ছিলাম। কিন্তু শহরটি ভাড়া, খাবার, ওষুধ এবং বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি পরিষেবার দিক থেকে অনেক ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, ফলে আলজাজিরায় থাকার কোনো অবস্থা ছিলনা। তারপর আমরা আমাদের বাবার গ্রাম, উম আলতিউর, নীল নদী রাজ্যে চলে আসি যেখানে আমরা এখন এক মাস ধরে বাস করছি।

আহমেদ একটি প্রাইভেট কোম্পানির একজন হিসাবরক্ষক ছিলেন। তিনি আনাদোলুকে বলেন যে এপ্রিল মাসে দুই সামরিক বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে তাকে এবং তার শত শত সহকর্মীকে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, কারণ বেসরকারী খাত তার কর্মীদের বেতন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। সরকারী সেক্টরের কর্মচারীরাও এর ব্যতিক্রম নয়।

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে

জনাব আহমেদ বলেন, সুদানের সশস্ত্র বাহিনী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহের অভাব এবং জ্বালানি, বিদ্যুৎ, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাবে আমাদের প্রতিবেশীদের অধিকাংশই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে এবং পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর। ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দেয়, তারা যথেষ্ট লোভী। কারণ তারা জনগণের চাহিদা এবং সরকারি নজরদারির অভাবকে কাজে লাগাচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির জন্য পরিচিত কারণগুলি ছাড়াও আরেকটি কারণ হচ্ছে অনিরাপদ রাস্তা এড়াতে ভিন্ন এবং দীর্ঘ রুট নিতে হয়, যার জ্বালানী খরচ দ্বিগুণ।

মিশর থেকে গম এবং অন্যান্য পণ্যের আমদানিকারক সাইদ আদেল মূল্যস্ফীতির কথা বলতে গিয়ে বলেন, পরিবহন ফি, আমদানি কর এবং জ্বালানী সরবরাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। সুদানে দুর্ভিক্ষ নিয়ে ব্যাপক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফসল কাটার মৌসুমে প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং জ্বালানির অভাবের কারণে সংকট বাড়ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও সতর্ক করেছে যে সুদানের অর্ধেক জনসংখ্যা তীব্র খাদ্য সংকটের সম্মুখীন এবং দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এফএও এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলছে, সর্বশেষ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ (আইপিসি) অনুমান অনুসারে ২০.৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ, যা দেশের জনসংখ্যার ৪২ শতাংশেরও বেশি, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার (আইপিসি ফেজ ৩ বা তার উপরে) সম্মুখীন হচ্ছে।

অধিকাংশ হাসপাতাল বন্ধ

দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সূত্রের মতে, অনেক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দুটি যুদ্ধকারী পক্ষের দ্বারা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার উপর আক্রমণের ফলে ইতিমধ্যেই ওষুধের ঘাটতি এবং রোগীদের জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের একজন আনাদোলুকে বলেন, খার্তুমের ৫৭ টি হাসপাতালের মধ্যে ৪০ টিরও বেশি এখনও বন্ধ রয়েছে এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ইতিমধ্যে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর নতুন এই পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলেছে।  

মৃতদের দাফন সংকট

যুদ্ধের ফলে জনগণ আরেকটি বড় সমস্যা মোকাবেলা করছে তা হচ্ছে তাদের প্রিয়জনকে কোথায় কবর দিবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, খার্তুম এবং দারফুর রাজ্যে কয়েক ডজন পরিবার তাদের বাড়ির ভিতরে আত্মীয়দের দাফন করতে বাধ্য হয়েছে কারণ তারা চলমান যুদ্ধের কারণে সঠিক জানাজার নামাজ পড়তে এবং কবরস্থানে দাফন করতে অক্ষম।

আবদুল্লাহ আল হাসান তার ভাইকে আগস্ট মাসে ওমদুরমানের উম্বাদা পাড়ায় তাদের বাড়িতে দাফন করতে বাধ্য হয়েছিল কারণ পরিবার তার লাশ নিকটতম কবরস্থানে নিয়ে যেতে পারেনি। তিনি আনাদোলুকে বলেন, গত সপ্তাহে যখন আমরা ঘুমাচ্ছিলাম তখন আমাদের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আমার ভাই নিহত হয়। আমরা আমাদের কিছু প্রতিবেশীর সাথে তাকে কবরস্থানে দাফন করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ওমদুরমানে সেদিনের সংঘর্ষ খুব তীব্র ছিল, তাই আমরা তাকে বাড়ির ভিতরে দাফন করি, এবং পরে আটবারায় আমাদের আত্মীয়দের সাথে থাকার জন্য সেই বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।

সূত্র : মুসলিম মিরর

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম বিশ্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কিয়ের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাং...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-05-23 09:44:54

১৯৯৫ সালে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-15 19:48:15

সুদান ভেঙ্গে আবারও নতুন দেশের উদয় হবে বলে ইসরাইল আশা করছে

মুসলিম বিশ্ব | 2023-04-29 02:07:05

রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদাতা Sberbank-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গনিয...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-14 03:30:52

২৮ জুন স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিশ্বব...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-01 04:57:28

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৩ সালকে একটি একটি কঠিন অর্থনৈতিক বছর...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-13 23:28:54

রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ন...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-08-30 12:58:03