মিরাজ রজনীর অলৌকিক যাত্রা


মাগদা আজম
Published: 2024-02-09 23:53:09 BdST | Updated: 2024-04-29 10:39:42 BdST

নবীজির মিরাজ জেরুজালেমের পবিত্রতাও প্রতিষ্ঠা করে, কারণ এটি সেই বিন্দু যেখানে পৃথিবী ও আকাশ মিলিত হয় এবং সেখান থেকে নবীজি আসমানে আরোহণ করেন। তাই মুসলিমদের দৃষ্টিতে শুধু মসজিদুল আকসা নয়, পুরো জেরুজালেম, মক্কা ও মদিনার পর একটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।


২৭ রজব মুসলিমরা রাসূল (সা.) এর অলৌকিক রাতের যাত্রা ইসরা এবং মিরাজকে স্মরণ করে। এ ঘটনার সঠিক তারিখ অনিশ্চিত, তবে অধিকাংশ ইসলামী স্কলার এটিকে হিজরতের ১২ থেকে ১৬ মাস আগে হয়েছে বলে ধারণা করেন।

এক রাতে, রাসূল (সা.) মক্কায় কাবাঘরের কাছে ঘুমাচ্ছিলেন, যখন ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) তাঁর কাছে আসেন, তাঁকে জাগিয়ে তোলেন এবং তাঁকে বাহু ধরে আল-বুরাকের কাছে নিয়ে যান, যা একটি ঘোড়ার মতো ছিল। যার রয়েছে দুটি বিশাল ডানা। তিনি মক্কা থেকে বুরাকে চড়ে জেরুজালেমের দিকে যাত্রা করেন। সেখানে অন্যান্য নবীদের সাথে রাসূল (সা.) এর সাক্ষাত হয়। তিনি নামলেন, বুরাককে জেরুজালেমের গেটে একটি আংটির সাথে বেঁধে দিলেন এবং তাদের নামাজে ইমামতি করলেন।

তারপর তার কাছে দুটি পাত্র আনা হল, একটিতে দুধ ছিল, অন্যটিতে শরাব ছিল। রাসূল (সা.) দুধ পান করলেন। জিব্রাইল বললেন, হে মুহাম্মাদ (সা.), আপনি যা পবিত্র তাই গ্রহণ করেন। নিশ্চয়ই আপনি আপনার জাতিকে সঠিক পথ দেখাবেন।

এই যাত্রা আল্লাহ তায়ালার শক্তি এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা প্রদর্শন করে। সময় এবং স্থানের ধারণা যেমন আমরা বুঝি তা এখানে প্রযোজ্য নয় এবং যা প্রযোজ্য তা আমাদের সীমিত চিন্তার দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। ফেরেশতা জিব্রাইলের নেতৃত্বে, রাসূল (সা.) সাত আসমানের মধ্য দিয়ে তার ভ্রমণ শুরু করেন। যেখানে তিনি সিদরাত আল-মুন্তাহাতে পৌঁছেন। এমন একটি দূরবর্তী গাছ, যা জাগতিক জ্ঞানের সমাপ্তির প্রতীক। এরপর তাকে ঐশ্বরিক উপস্থিতির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।

নামাযের বাধ্যবাধকতা

আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদেরকে দিনে ৫০ বার সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর নবীজি মুসা (আ.) এর সাথে দেখা করেছিলেন, যিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তার অনুসারীদের উপর কতবার প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নবীজি যখন ৫০ উত্তর দিলেন, মুসা (আ.) তাকে বললেন, "জামাতের নামাজ ভারী এবং আপনার লোকেরা দুর্বল"। তিনি তাকে ফিরে যেতে এবং আল্লাহর কাছে তা হ্রাস করার জন্য অনুরোধ করার পরামর্শ দেন। নবীজি বেশ কয়েবার আল্লাহর কাছে যাওয়া আসা করেন। প্রতিবার সংখ্যাটি হ্রাস করে আনেন। কিন্তু যতক্ষণ না শেষ পর্যন্ত তিনি দিনে ৫টি নামায কমিয়েছেন ততক্ষণ তিনি থামেননি।  এবং বলা হয় যদি কেউ ৫বার সালাত সঠিকভাবে পালন করে তবে তাকে ৫০বার সালাতের পুরস্কার দেওয়া হবে।

এই ভ্রমণ শেষে তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। যখন তিনি লোকদেরকে তার সাথে কী ঘটেছে তা বললেন, বিশ্বাসে দুর্বল মুসলিমরা রাসূল (সা.) বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করল।  যখন তার বন্ধু এবং সমর্থক আবু বকর (রা.) কে এই বিষয়ে অবস্থান নিতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, যদি মুহম্মদ (সা.) বলেন যে এটা ঘটেছে, তাহলে এটা অবশ্যই ঘটেছে। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম যখন সে প্রথম তার ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশের কথা বলেছিল, এখন কেন তাকে সন্দেহ করব? এভাবেই এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আবু বকর আস-সিদ্দিক (সত্যবাদী) উপাধি লাভ করেন।

বিশ্বাসের একটি পরীক্ষা

এবং আমরা আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছিলাম তা মানবজাতিকে জন্য পরীক্ষা করার জন্য স্থাপন করেছি (কুরআন ১৭:৬০)

এই অলৌকিক ঘটনাটি সাহাবীদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রথম কঠিন পরীক্ষা ছিল যখন তারা এমন একটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল যা পরীক্ষামূলকভাবে পরিমাপ করা যায় না। নবীজির জন্য আল্লাহর নিদর্শন দেখার পর তার ঈমান দৃঢ় হয়। মক্কা থেকে জেরুজালেম ভ্রমণ পরিকল্পনাহীন ছিলনা। এই অঞ্চলটি সমস্ত ধর্মের দোলনা হিসাবে পরিচিত এবং মুহাম্মদ (সা.) এর বাণী সমস্ত পূর্ববর্তী  ধর্মের সত্য বানী সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।

এই অলৌকিক ভ্রমণ বেশ কিছু তথ্য প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমত, রাসূল (সা.) এর মর্যাদা, যেহেতু তিনি সমস্ত নবীদের নামাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং যেখানে অন্য কাউকে এমনকি জিব্রাইলকে (আ.) ও অনুমতি দেওয়া হয়নি।

নবীজির মেরাজ জেরুজালেমের পবিত্রতাও প্রতিষ্ঠা করে, কারণ এটি সেই বিন্দু যেখানে পৃথিবী ও আকাশ মিলিত হয় এবং সেখান থেকে নবীজি আসমানে আরোহণ করেন। তাই মুসলিমদের দৃষ্টিতে শুধু মসজিদুল আকসা নয়, পুরো জেরুজালেম, মক্কা ও মদিনার পর একটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

নবীজির যুগের মতো, মুসলিমরা এখন সব ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে এবং তাদের ঈমান ক্রমাগত পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই বরকতময় উপলক্ষে আমরা স্মরণ করি যে আমাদের বিশ্বাসই একমাত্র আসল জিনিস; আমাদের চারপাশের অশান্তির এই সাগরে এটি আমাদের জীবন রক্ষাকারী। আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর বাণীর প্রতি আমাদের বিশ্বাস অটুট থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অপরাজেয়।


লেখক : মাগদা আজম

সূত্র : এ্যাবাউট ইসলাম

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


ইসলামী বিষয়াবলী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে সজীব, তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট, তারা থাকবে...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-04-23 23:36:39

রাসূল স. বলেছেনঃ বেশি বেশি কোর’আন তেলা’ওয়াত কর, কেননা হাশরের দিন এ কো...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-15 23:24:11

হযরত মুয়াজ (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছ থেকে কিয়ামতের দিন প্রথম তিনজন জাহা...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-02-22 00:11:13

মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আপনার উচিত সর্বদা জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকা।...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-29 08:34:21

"হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অক্ষমতা, অলসত...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-05-06 13:46:07

হজ্জ্ব ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর জি...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-16 23:47:11

হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয় হাদীসগ্রন্থেই...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-22 23:12:36

রাসূল (সা.) এর এক হাদীসে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষন হিসেবে দশটি নি...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2019-04-10 23:46:12