সূরা আল কাহাফে বর্ণিত গুহাবাসী সাত যুবকের গল্প
ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2022-08-11 20:27:34 BdST | Updated: 2024-05-14 23:51:42 BdST
সূরা আল কাহাফের ১১০ টি আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরায় ৯-২৬ আয়াত পর্যন্ত গুহায় ঘুমন্ত যে মানুষগুলোর কথা বলা হয়েছে সেখান থেকেই গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে।
শুরুতেই একটি রূপক গল্প সহ তিনটি গল্প সুরাটিতে রয়েছে যেগুলোর সাথে কোর’আনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সেই সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গল্পগুলো মক্কার শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক ক্রমাগত নির্যাতিত মুসলিমদের সান্ত্বনা দিতে আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। সেই সাথে মুহাম্মদ সঃ প্রতি কাফেরদের ছুঁড়ে দেয়া তিনটি প্রশ্নের উত্তরেও আল্লাহ সূরাটি অবতীর্ণ করেছেন।
আয়াত ১-১৩; মহামান্বিত কিতাব
সকল প্রশংসা সেই মহান প্রভুর যিনি এমন এক পূর্ণাঙ্গ কিতাব নাযিল করেছে; যা কখনো সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেয়না।
একদিকে আয়াতগুলোতে যেমন মহান শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে সেই সাথে যারা ভালো কাজ করেছে তাদের জন্য মহা পুরস্কারের সুসংবাদও দেয়া হয়েছে। তাদের জন্যই মহা শাস্তির কথা বলা হয়েছে যারা বলে আল্লাহর সন্তান রয়েছে অথচ এ জঘন্য মিথ্যার ব্যাপারে তাদের কাছে কোন তথ্য প্রমাণ নেই।
রাসূল মুহাম্মদ স. বলেছেন, যখন মানুষগুলো তাঁর কথা শুনছিলনা, মনে হচ্ছে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতেই তিনি মারা যাবেন। সত্য বলতে কি, এ পৃথিবীর সকল কিছুই মায়া ছাড়া আর কিছুই না, সকল আকর্ষণীয় বস্তুসম্ভার সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। একদিন সব শেষ হয়ে যাবে।
আপনি কি গুহায় ঘুমন্ত সেই ব্যক্তিদের কথা ভেবে আশ্চর্য হচ্ছেন?
এই যুবকেরা একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিল যেন তিনি তাদের সরল পথের উপর টিকিয়ে রাখেন এবং তাদের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ তাদের গভীর ঘুমে নিমজ্জিত করে দিলেন আর এভাবেই তাদের কেটে গেল বহুদিন।
কতযুগ ধরে তারা ঘুমিয়েছেন তা নিয়ে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মাঝে দ্বন্দ্ব হচ্ছিল, আল্লাহ এ বিষয়ে আয়াত নাযিল করে সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন তারা ছিল সেই যুবক যাদের ঈমান ছিল অত্যন্ত মজবুত এবং আল্লাহ তা আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।
আয়াতঃ ১৪-২৬, গুহাবাসীদের গল্প
এই গুহায় আশ্রয় নেয়ার আগে এই যুবকেরা ঘোষণা দিয়েছিল তারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইবাদতের যোগ্য বলে মনে করেনা তাই এক আল্লাহ ছাড়া তারাও আর কারো ইবাদত করবেনা।
কোন প্রকার যৌক্তিক প্রমাণ ছাড়াই যখন মানুষ অন্যান্য প্রভুকে গ্রহণ করেছে এবং তাদের ইবাদত করছে সে সমাজ এ যুবকদের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই তারা পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিল তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে যাবে, দয়াময় আল্লাহ অবশ্যই রহমতের চাদরে তাদের ঢেকে দিবেন এবং সরল পথ প্রদর্শন করবেন।
যদি আপনি সেই যুবকদের সাথে থাকতেন তবে দেখতেন তাদের উপর সূর্য ডানে উদিত হয় এবং বামে অস্ত যায়। তার মানে তারা গুহার অভ্যন্তরে এক খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে আছেন।
এ হচ্ছে মহান প্রভুর একটি নিদর্শন। যেখানে কতক লোক সত্য পথ বেছে নিয়েছে তো অধিকাংশই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি আপনি তাদের দেখেন তবে মনে হবে তারা ঘুমন্ত নয় বরং জাগ্রত, তারা একপাশ থেকে অন্যপাশ বদল করে আর তাদের কুকুরটি গুহা মুখেই লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।
যদি আপনি তাদের দেখেন তবে ভয়ে পালিয়ে আসবেন। আল্লাহ এভাবেই তাদের ঘুম দিয়েছেন এবং জাগ্রতও করেছেন।
ঘুম থেকে উঠে একে অপরকে জিজ্ঞাসা করছে আমরা কতসময় ঘুমিয়েছি? কেউ বলল সারাদিন কেউবা বলল দিনের কিছু অংশ তবে সবশেষে তারা ঐক্যমতে পৌছেছে যে আল্লাহই অধিক ভাল জানেন আমরা কতকাল ঘুমিয়েছি।
তাদের একজনকে একটি রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে শহরে পাঠানো হল বাজার করার জন্য। অন্যেরা তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলল কেউ জিজ্ঞাসা করলে যেন না বলে কোথা থেকে এসেছে কারণ এমন হতে পারে অত্যাচারী ও পাপাচারীরা তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে অথবা আগের ধর্মে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
আল্লাহ তাদেরকে মানুষের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত করলেন যেন মানুষ বুঝতে পারে যে হাশরের প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য।
যারা তাদের খুঁজে পেয়েছিল তারা তাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিজেদের মাঝে বিতন্ডা করছিল, বিজয়ীরা তাদের পাশে একটি ইবাদত গৃহ নির্মাণ করল। যারাই তাদের গল্প শুনছিল তারাই তাদের ঘুমের সময় নিয়ে বিতর্ক করছিল, কেউ সঠিক বলতে পারছিল না কারণ মাত্র কয়েকজন তাদের সমন্ধে পূর্ণ জ্ঞান রাখত।
সুতরাং যা সত্য তা মেনে নাও এবং সর্বদা আল্লাহর ইচ্ছার মুখাপেক্ষী হও। যদি তুমি ভুলে যাও তবে আল্লাহকে স্মরণ কর, আশা করা যায় তিনি তোমাকে আরও ভাল উপায় বাতলে দিবেন।
কেউ কেউ বলত সে যুবকেরা গুহা ঘুমিয়েছে প্রায় ৩০০ বছর আবার কারো মতে ৩০৯ বছর কিন্তু রাসূল স. বললেন শুধুমাত্র আল্লাহই এ বিষয়ে সবচেয়ে ভাল জানেন কারণ আকাশ ও জমিনের সকল গোপন তথ্য একমাত্র তাঁর কাছেই রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আর কোন রক্ষাকর্তা নেই এবং তিনি আপন সত্তায় কাউকে কখনো শরীক করেন না।
আয়াতঃ ২৭-৩১, পছন্দ আপনার
নবী করীম স. এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাই তাকে পাঠ করে শুনাতে বলা হয়েছে এখানে কোন প্রকার পরিবর্তনের কোন অধিকার তাঁর নেই। তাই যারা আল্লাহকে খুঁজে ফিরে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও আর মক্কার দুষ্কৃতিকারী ও অত্যাচারীদের মত হয়োনা।
লোকেদের বলে দিন সত্য তাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে, এখন যার ইচ্ছা আল্লাহর উপর ঈমান আনুক যার খুশি সে বেইমানি করুক। অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম যা আগুনে পরিপূর্ণ, রয়েছে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় আর রয়েছে অগণিত দুর্ভোগ। যে ভাল কাজ করবে সে তার প্রাপ্য অবশ্যই পাবে, তার ভাল কাজ কখনো নষ্ট করে দেয়া হবেনা, তাদের দেয়া হবে জান্নাত যেখানে তয়েছে বাগান ও ঝর্ণাধারা। পরিধান করবে স্বর্ণ খচিত বেশমি কাপড় এবং বসবে উঁচু আরামদায়ক আসনে, কতইনা আরামের জায়গা সে জান্নাত।
আয়াতঃ ৩২-৪৪, একটি নৈতিক গল্প
হে নবী স. আপনি মানুষদের এ রূপক গল্প শুনিয়ে দিন, দুই লোকের ছিল স্ব স্ব বাগান ও চাষাবাদযোগ্য জমিন। দুইজনের জমিতে ভাল ফসল উৎপাদিত হত এবং তাদের জমির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী।
এক ব্যক্তি অন্যকে বলল তার অনেক সম্পদ ও গুণগ্রাহী আছে, এই বলে বাগানে প্রবেশ করে বলতে লাগল এ সম্পদ কখনো শেষ হবেনা এবং শেষ বিচার বলতেও কিছু নেই, যদি হাশর বলতে কিছু থেকেই থাকে তবে আল্লাহ তাকে আরও বেশী পুরস্কৃত করবেন।
অপরজন তাকে বলল, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ? আমি তোমার মত অস্বীকার করছি না, আর তোমার বলা উচিৎ যা হয়েছে সব আল্লাহর দান এবং তিনি ছাড়া আর কারও এ ক্ষমতা নেই।
যদিও সম্পদ আমার তোমার থেকে কম তবে আশা রাখি আল্লাহ আমাকে আরও উত্তম কিছু দান করবেন এবং তোমার অহংকার কমিয়ে দিবেন।
কিছুদিন পর প্রথম ব্যাক্তির সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল যাকে সে আল্লাহর চাইতেও বড় মনে করত। অবশেষে সে বুঝতে পারল আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রক্ষাকর্তা হতে পারেনা।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: