হুথি যোদ্ধারা গাজার গণহত্যা বন্ধ করতে পারেনি কিন্তু পাশ্চাত্যের নৈতিক দেউলিয়াত্ব উন্মোচিত করেছে


আহমেদ তাওয়াইজ
Published: 2024-02-07 23:44:04 BdST | Updated: 2024-04-29 10:53:02 BdST

ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা গাজায় ইসরায়েলী বর্বর গণহত্যা বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু লোহিত সাগরে ইসরায়েল-গামী এবং ইসরায়েল-মালিকানাধীন জাহাজ সমূহে তাদের আক্রমণের ফলে যুক্তরাষ্ট্র  ও পাশ্চাত্যের  নৈতিক দেউলিয়াত্ব উন্মোচিত হয়েছে।


ইয়েমেনে ১২ জানুয়ারী থেকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডের সহায়তায় ব্রিটিশ এবং আমেরিকান বিমান হামলা  শুরু হয়েছে। যা আবারও প্রমাণ করে যে কীভাবে বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ তাদের অর্থ এবং লাভকে মানুষের জীবনের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দেয়।

গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ হচ্ছে ইতিহাসের প্রথম সরাসরি সম্প্রচারিত গণহত্যা। যা ৭ অক্টোবর থেকে ২৭ হাজারের এরও বেশি ফিলিস্তিনির জীবন নিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। গাজায় উপত্যকাকে অবরুদ্ধ করে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদেরকে দূর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে। পরিস্থিতি এমন মানবিক বিপর্যয়ের দিকে চলে যায় যে হাসাপাতাল সমূহে ডাক্তারগণ অবিচ্ছিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে চেতনানাশক ছাড়াই অঙ্গচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়। এই অনস্বীকার্য মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পশ্চিমা সরকারগুলো কোনো অর্থবহ পদক্ষেপ নেয়নি। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক উভয়েই বারবার স্পষ্ট করেছেন যে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনিদের মানবিক ক্ষতির মূল্য যাই হোক না কেন তারা নিঃশর্তভাবে "হামাস নির্মূল" করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যাবে।

কয়েক হাজার বেসামরিক লোকের হত্যা, পঙ্গুত্ব ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পশ্চিমা দেশগুলির কোন উদ্বেগ দেখা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মান্দেব প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাওয়া বাণিজ্যিক জাহাজ সমূহের ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের দ্বারা বেশ কয়েকটি অ-মারাত্মক আক্রমণ এই পশ্চিমা দেশগুলিকে সক্রিয় করে তোলে।

এটা স্পষ্ট যে হুথি যোদ্ধাদের হামলার কারণে শিপিং খরচের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য তারা যে ডলার এবং পাউন্ড হারাচ্ছিল, তা মধ্যপ্রাচ্যের রক্তের নদী চেয়ে "মুক্ত বিশ্বের" এই নেতাদের কাছে বেশি মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছিল।

বাব আল-মান্দেব প্রণালী পেরিয়ে লোহিত সাগর মধ্য দিয়ে সুয়েজ খাল পর্যন্ত এই নৌপথ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ সমূহের মধ্যে একটি। অনুমান করা হয় যে উপসাগর থেকে পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বেশিরভাগ রপ্তানি সহ সমস্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১২ শতাংশ এই প্রণালী দিয়ে অতিক্রম করে। যার বাণিজ্য মূল্য প্রতি বছর ১ ট্রিলিয়ন ইউ এস ডলার।

ভূমধ্যসাগরের পূর্বে অবস্থিত ইসরায়েল তার বেশিরভাগ পণ্যের জন্য এই বাণিজ্য রুটের উপর নির্ভর করে। তাদের এই নির্ভরতার কারণে হুথি সংগঠন বাব আল-মান্দেবের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইসরায়েল-গামী এবং ইসরায়েল-মালিকানাধীন জাহাজ সমূহে হামলা ও আটক করতে শুরু করে। তারা বলেছে যে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে বা অন্তত পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তার অনুমতি দিলে তারা এই হামলা বন্ধ করবে।

লোহিত সাগরের জাহাজ সমূহের হুথি হামলা হলিউড অ্যাকশন মুভির দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়। এসকল হামালায় এ পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু জাহাজের বেসামরিক ক্রুদের মধ্যে কোন প্রাণহানি ঘটেনি, তবে ইসরায়েল এবং তার সমর্থকদের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে। অনুমান করা হয় যে হুথি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরায়েলের প্রধান বন্দর ইলাতে কার্যক্রম ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

এই আক্রমণ সমূহের কারণে তাদের শিপিং কোম্পানি সমূহ সম্পূর্ণরূপে লোহিত সাগরে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। এর ফলে বিকল্প পথে দূরত্ব অনেক বেড়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহে গুরুতর বিলম্বের পাশাপাশি শিপিং খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, নভেম্বর মাসে এই মূল শিপিং রুটে প্রতিবন্ধকতা শুরু হওয়ায় আগের তুলনায় সাধারণ শিপিংয়ের মূল ৩২৯ শতাংশ বেশি বেড়েছে।

হুথিদের আক্রমণ ইয়েমেন এবং আশেপাশের অঞ্চলে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে এবং ইরান-সমর্থিত এই সংগঠনকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি সম্মানজনক এবং উল্লেখযোগ্য উদিয়মান প্রতিরোধ শক্তি হিসাবে সামনে নিয়ে এসেছে। পুনর্বিন্যাস করার দিকে পরিচালিত করেছে।

পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্যই এ সব এড়িয়ে যেতে পারত এবং অনেক ফিলিস্তিনির জীবন বাঁচাতে পারত, কেবল ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের অবসান ঘটাতে বাধ্য করে। ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধ করার কথা বলে বিরক্ত করার পরিবর্তে, পশ্চিমের নেতারা বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশের বিরুদ্ধে আরেকটি বোমা হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা কেবল এটা দেখায় না যে তারা তাদের মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে উদ্বেগ বোধ  করে না, তারা এটাও দেখায় যে, তারা পশ্চিমা বাণিজ্যিক জায়ান্টদের লাভের মার্জিনকে মধ্যপ্রাচ্যের সকল ফিলিস্তিনির জীবনের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দেয়।


লেখক : আহমেদ তাওয়াইজ

সূত্র : আল-জাজিরা

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম বিশ্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কিয়ের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাং...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-05-23 09:44:54

১৯৯৫ সালে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-15 19:48:15

সুদান ভেঙ্গে আবারও নতুন দেশের উদয় হবে বলে ইসরাইল আশা করছে

মুসলিম বিশ্ব | 2023-04-29 02:07:05

২৮ জুন স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিশ্বব...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-01 04:57:28

রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদাতা Sberbank-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গনিয...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-14 03:30:52

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৩ সালকে একটি একটি কঠিন অর্থনৈতিক বছর...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-13 23:28:54

রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ন...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-08-30 12:58:03