আল-বিরুনি: একজন মুসলিম প্রতিভা এবং বহুবিদ্যাজ্ঞ ব্যক্তি
আব্দুল্লাহি জামা, এবাউট ইসলাম.নেট
Published: 2023-05-22 13:24:27 BdST | Updated: 2024-04-29 11:33:43 BdST
বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন রূপার থালায় আসেনি। যেসব উদ্ভাবনগুলি থেকে আমরা আজ উপকৃত হচ্ছি সেগুলো তৈরি করতে পুরুষ ও মহিলাদের যুগ যুগ লেগেছে, এক্ষেত্রে মুসলিম বিজ্ঞানীদের ভূমিকা অন্যদের চেয়ে কম নয়। এমনই একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন মহান পারস্য বিজ্ঞানী আবুরায়হান আল-বিরুনি।
আল-বিরুনি একজন বিশিষ্ট মুসলিম মধ্যযুগীয় বিজ্ঞানী, যিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ইসলামী সভ্যতার স্বর্ণযুগে, যা বলা যেতে পারে ৭৫০ থেকে ১২৫৮ সালের মধ্যে প্রসারিত ছিল।
অনেক ঐতিহাসিকের মতে, আল-বিরুনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন। তিনি বিজ্ঞানের অনেকগুলি শাখা অধ্যয়ন করেছেন, এবং বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে প্রচুর ব্যবহারিক কাজ করেছেন।
আল-বিরুনি আধুনিক বিজ্ঞানের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন, কিন্তু তার কোনো কাজই বিশ শতক পর্যন্ত পশ্চিমা ভাষায় অনূদিত হয়নি।
নাইরোবি মুসলিম একাডেমির ইতিহাসের শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ ফাতুমা সামানের মতে, একজন মুসলিম বিজ্ঞানী হিসাবে তার প্রভাব ছিল স্পষ্ট। কিন্তু ইতিহাসের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে তাকে যে ধরনের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল তা দেওয়া হয়নি, যেমনটি ইউরোপের রেনেসাঁ বিজ্ঞানীদের দেওয়া হয়েছিল।
এই ঘটনাটি কেবল আল-বিরুনির ক্ষেত্রেই ঘটেনি বরং অনেক মুসলিম মধ্যযুগীয় বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য যাদের উচ্চাভিলাষী এবং যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলিকে তাকের নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল কেবল তার উপর ধূলার স্তর জমার জন্য।
যাইহোক, ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে আল-বিরুনি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা কেবল মুসলিম পণ্ডিতদের মধ্যেই নয়, সর্বকালের বিজ্ঞানীদের মধ্যেও একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।
পলিম্যাথ
আল-বিরুনি ৪ সেপ্টেম্বর ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে খোরাসানের (আধুনিক উজবেকিস্তান,) খোয়ারেজম-এ জন্মগ্রহণ করেন। ১০৫২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অক্লান্তভাবে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছিলেন।
অনেক ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে, আল-বিরুনি সমগ্র মধ্যযুগের সবচেয়ে দক্ষ বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন।
তিনি তার বুদ্ধি এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা দিয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিপ্লবাত্মক অবদানের জন্য কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। বিজ্ঞানের অনেকগুলি শাখায় তিনি অমোচনীয় স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষায়, তাকে “পলিম্যাথ” (বহুবিদ্যাজ্ঞ বা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী) হিসাবে গণ্য করা হয়। তিনি তার সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষার দ্বারা তার সময়ের বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার অগ্রগতির জন্য কোন সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
বিশাল নৃবিজ্ঞান থেকে জটিল জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতিষশাস্ত্র পর্যন্ত; যৌগিক রসায়ন থেকে তুলনামূলক সমাজবিজ্ঞান পর্যন্ত; বৈজ্ঞানিক গণিত থেকে অভূতপূর্ব পদার্থবিদ্যা পর্যন্ত; এবং আচরণগত মনোবিজ্ঞান থেকে নীতি দর্শনে - প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অসাধারণ অবদান ছিল।
আল-বিরুনি বলেন যে, “আমি জ্যামিতি দিয়ে শুরু করে পাটিগণিত এবং সংখ্যা বিজ্ঞানে গিয়েছি, তারপর মহাবিশ্বের কাঠামো এবং অবশেষে জ্যোতিষশাস্ত্রে চলে এসেছি। কারণ কেউই জ্যোতিষীর শৈলী এবং উপাধির যোগ্য নয় যিনি এই চারটি বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি পরিচিত নন।"
ইংরেজ রেনেসাঁর জ্যোতিষী উইলিয়াম লিলি তার বই 'খ্রিস্টান এস্ট্রোলজি”'-এ আল-বিরুনিকে একজন মহান জ্ঞানী ব্যক্তি হিসাবে বর্ণনা করেছেন, মধ্যযুগে যার ছিল বিজ্ঞানের প্রতি অতুলনীয় আকাঙ্ক্ষা।
লিলি আরও লিখেন, “একজন চমৎকার তার্কিক বা যুক্তিবিদ, জ্ঞান এবং বিচক্ষণতার সাথে যুক্তি উপস্থাপন করেন এবং তার বক্তব্যে অনেক বাগ্মীতা ব্যবহার করেন, সমস্ত ধরণের রহস্য এবং জ্ঞানের গবেষক,, তীক্ষ্ণ এবং বুদ্ধিমান, শিক্ষক ছাড়াই প্রায় সবকিছু শেখেন; প্রতিটি বিজ্ঞানে সূক্ষ্ম হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী, স্বাভাবিকভাবে ভ্রমণাঙ্খী এবং বিদেশে বিভিন্ন জায়গা দেখতে আগ্রহী: একজন অক্লান্ত কল্পনাশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি, গূঢ় জ্ঞানের সন্ধানে উৎসুক; তার নিজের প্রতিভা দ্বারা বিস্ময় তৈরি করতে সক্ষম; ভবিষ্যদ্বাণী এবং আরও গোপন বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত।”
(চলবে)
সূত্র: এবাউট ইসলাম
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: