গর্ভবতী অবস্থায় আপনার সন্তানের সাথে কথা বলুন
হাসনা হাসান; অনুবাদ: সাদিক হাসান
Published: 2017-12-14 10:21:19 BdST | Updated: 2024-05-14 23:42:46 BdST
Photo Credit: Fotolia
গর্ভের সন্তানের সাথে কথা বললে একেবারে শুরু থেকেই সন্তান ও মায়ের মাঝে এক শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠে।
সন্তান ও মায়ের মধ্যেকার আবেগময় সম্পর্ককে সর্বশ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী ভালোবাসা বলেই বিশ্বাস করা হয়।
সকল সৃষ্টির ক্ষেত্রেই আল্লাহ তায়ালা মা ও সন্তানের মাঝে এক ঐশ্বরিক ভালোবাসার বন্ধন সৃজন করে দিয়েছেন। তথাপি, এ ক্ষেত্রে মা সন্তান জন্মানোর আগে থেকেই এই বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন।
মায়েরা সর্বদাই নিজের গর্ভে ধারণকৃত ছোট্ট এই অনিন্দ্য সুন্দর, বিষ্ময়কর সৃষ্টি নিয়ে সর্বদাই উচ্ছাসিত থাকেন। সে দেখতে কেমন হবে? তার জন্য কোন নামটি ভালো হবে? এ সকল বিষয় ভেবে মায়েরা অনেক সময় ব্যয় করে থাকেন। প্রত্যাশিত মায়েরা ভাবনায় থাকেন, তারা সন্তানের জন্য আদর্শ মা হতে পারবেন কিনা ; মা হওয়ার পরবর্তী সময়ের সাথে মানিয়ে চলার জন্য কাজেকর্মে ও জীবনযাত্রায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে থাকেন। অপেক্ষমাণ নব আগমনকারীর জন্য বাজার তালিকা ও নতুন ঘরের সাজগোজের প্রস্তুতিও এ সময় নিয়ে থাকেন।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য এগুলো সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু তারা মূলত এই সবই করে থাকেন নবজাতককে কেন্দ্র করে। বিষয়টি জন্ম নেওয়ার পরবর্তী সময়ের জন্য। জন্ম নেওয়ার পূর্বে গর্ভবতী অবস্থায় কি করা হয়?
কখন সে আমাকে শুনতে পায়?
যেহেতু, গর্ভের সন্তানের সাথে কথা বললে শুরু থেকেই বন্ধন দৃঢ় হয়। আপনার কণ্ঠস্বর গর্ভের সন্তানকে প্রশান্তি এনে দেয় এবং সে তা বারংবার শুনতে পছন্দ করে। গবেষকগন বলেছেন শিশুরা মূলত ১৮/১৯ সপ্তাহ থেকেই আপনার কথাবার্তা শুনতে আরম্ভ করে। তাদের প্রতিক্রিয়াই বলে দেয় কখন ও কিভাবে তারা শুনতে পাচ্ছে।
উদাহরণ স্বরুপ, সাধারণত গর্ভাবস্থায় ৬ মাসের মাঝে শিশু বারংবার যা শুনে তা শব্দাবলীর মাঝে সুপ্ত থেকে যায়। সাতমাস থেকে পুনঃপুন উচ্চারিত শব্দগুলো বাচ্চাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে থাকে এবং তাদের শ্রবণশক্তির উন্নয়ন ঘটে। সুতরাং, আপনি যদি তাকে ঘুমানোর পূর্বে কোন গল্প শোনান কিংবা তার বাবা তার সাথে কথা বলে, তবে একই কথাগুলো বারংবার শুনতে সে আগ্রহী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, সেই সাথে জন্মের পরপরই এর চমকপ্রদ ফলাফল দেখা যেতে পারে!
বাচ্চাদের উচ্চস্বর ও গোলমেলে আওয়াজ থেকে দূরে রাখাই নিরাপদ, অন্যথায় তা তার কষ্টের কারণ হতে পারে। নরম ও শান্ত স্বরে তার সাথে কথা বলুন। দেখবেন জন্মের পরপরই বাচ্চাটি আপনার কণ্ঠস্বর চিনতে পারছে।
কি কথা বলবেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, শুধুমাত্র তার আসন্ন আগমনে আপনার উছাসটিই প্রকাশ করুন, তাকে বলুন আপনি তাকে কত ভালোবাসেন সেই সাথে তার আগমন উপলক্ষে আপনি কতটুকুন প্রতীক্ষায় রয়েছেন। তাকে কোন গান গেয়ে শোনান এবং এই তালের সাথে তাকে পরিচিত করে তুলুন। তাকে শান্ত করতে হালকা সঙ্গীত বাজাতে পারেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে বাচ্চারা সাধারণত হালকা সঙ্গীত পছন্দ করে (মুজার্ট ও ভিভিলদি এ ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন) অথবা অন্য যে কোন সঙ্গীত যা মায়ের হৃদস্পন্দন মিনিটে ৬০ বারের মাঝে নিয়ন্ত্রিত হয়।
আপনার কন্ঠস্বরই সবকিছু
আপনি আপনার স্বামীকেও এ কাজে উৎসাহিত করুন। তা আপনাকে যেমন আনন্দ দিবে সেই সাথে আপনাদের সম্পর্কের বন্ধনও দম্পতি হিসেবে গড়ে উঠবে। আরেকটি সমীক্ষা যেখানে ৬০ জন মহিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো, দেখা গেছে।
মায়ের তলপেটে রাখা স্পিকারে বাজানো দুই মিনিটের রেকর্ডেড কবিতা বাজিয়ে ভ্রূণের মারাত্মক হৃদস্পন্দন মাপা হয়। মায়ের কন্ঠে আবৃতি শুনে ৩০ জনের মাঝে ২১ জনের স্পন্দন ৫ মাত্রা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে অপরিচিত কন্ঠের আবৃতি শুনে ৩০ জনের মাঝে ২১ জনের ৪ মাত্রা পর্যন্ত বৃদ্ধিপায়।
গবেষকদের জন্য এটি ছিলো এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে ভ্রুণ থেকেই মনঃসংযোগ, স্মৃতিধারণ ও শিখার বিষয়টি বিকশিত হতে থাকে। শিশুর সাথে কথা বলতে পারাটা আপনার জন্য এক বিরাট পাওয়া। এভাবে আপনি আপনার ভালবাসার শিশুর প্রতি আবেগ অনুভূতিগুলো সহজেই প্রকাশ করতে পারবেন। এভাবে প্রাত্যহিক কথোপকথনে আপনার সাথে তার যোগাযোগ উপভোগ্য হয়ে উঠবে, বিশেষত যখন সে লাথি কিংবা অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করবে।
অধিকন্তু, যদি এটি আপনার প্রথম সন্তান না হয় এবং আপনার অন্য কোন ছোট সন্তান থেকে থাকে তবে তাদের দিয়েও আগত সন্তানের সাথে কথা বলান। এতে তারা ব্যাপারটি উপভোগের পাশাপাশি তার সাথে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবে এবং আগত দিনগুলোতে নতুন অতিথীর প্রতি ঈর্ষান্বিত ও সংসয়ে থাকার পরিবর্তে তার আগমনের প্রত্যাশায় থাকবে।
তাই, লজ্জা না পেয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলুন। কোনকিছু পড়ে শুনান, গেয়ে শুনান কিংবা তাকে আপনার কথাই শুনান। কি বলছেন তা কোন বিষয় না - কেননা বাচ্চারা কোনভাবেই তা বুঝতে পারেনা। শুধুমাত্র আপনার কণ্ঠস্বরই তাদের উচ্ছাসিত করে তোলে।
তথ্যসূত্র :
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: