রামাদানে অতিথি আপ্যায়নে খাবারের অপচয় কিভাবে রোধ করবেন?
সাদাফ ফারুকী
Published: 2024-03-26 03:25:29 BdST | Updated: 2024-04-29 06:21:39 BdST
প্রশ্ন :
কিছু মুসলিম যখন রামাদানে অতিথিদেরকে আমন্ত্রণ জানায় তখন মনে করে আমাদের উদারতার চিহ্ন হিসাবে টেবিলে সর্বাধিক পরিমাণ খাবার রাখতে হবে, তবে কখনও এটি অপচয়ের কারণ হয়। আর বেশি খাওয়া রোযার হিকমতের পরিপন্থী। কিভাবে এক্ষেত্রে ভারসাম্য রেখে অপচয় রোধ করা যায়?
উত্তর :
এ প্রশ্নটি একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিশেষ করে রামাদানের এই বরকতময় মাসে, যাতে আমরা আমাদের সময়, শক্তি এবং অন্য সকল নেয়ামত কীভাবে সর্বাধিক ভালভাবে ব্যয় করতে পারি, যার ফলে আমরা ভাল কাজের সর্বোচ্চ প্রতিদান পেতে পারি। এ প্রশ্নের সাথে দুটি দিক জড়িত. প্রথমটি হল ইসলামে একজন অতিথিকে সম্মান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং রোজাদার মুসলিমকে ইফতার করানোর জন্য রয়েছে উচ্চ পুরস্কার। দ্বিতীয় দিকটি হল ইসলামে খাদ্যের অপচয় এবং পানাহারে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, খাও ও পান করো, কিন্তু অযথা অপচয় করো না, নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (কোরআন ৭:৩১)
তিনি কোরআনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কিছু সাহাবীর প্রশংসা করেছেন, যারা তাদের বাড়ির সমস্ত খাবার বিচক্ষণতার সাথে তাদের অতিথিদেরকে খাওয়াতেন এবং নিজেরা ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তেন, কারণ পর্যাপ্তভাবে তাদের অতিথিকে খাওয়ানোর কারণে তাদের কাছে যথেষ্ট খাবার থাকত না।
কিন্তু তারা নিজেদের উপরে অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তারা দারিদ্রতায় রয়েছে। আর যারা নিজেরকে লোভ থেকে রক্ষা করতে পারে, তারাই সফলকাম। (কোরআন ৫৯:৯)
প্রকৃতপক্ষে, রামাদানে আমাদের বাড়িতে যেসকল অতিথিরা আসে, বিশেষ করে যদি তারা রোজাদার মুসলিম হন, তাহলে তাদের সম্মান করা এবং তাদের ইফতারের জন্য তাদেরকে সাধ্যমত ভাল খাওয়ানো আমাদের উপর ওয়াজিব।
তবে এক্ষেত্রে মেহমানদারী করতে গিয়ে খাবার এবং অর্থ ব্যয়ে অপচয় ও অযৌক্তিক হওয়া উচিত নয়। অতিথিদের সাথে অলস কথাবার্তা এবং গসিপে সময় নষ্ট করাও উচিত নয়।
অধিকন্তু রামাদানে ইফতারের আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের ইবাদাত সমূহকে বিলম্বিত বা দুর্বল করে ফেলা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যাশিত অতিথিদের জন্য একটি বিশেষ ইফতারের খাবার প্রস্তুত ও আয়োজন করতে আমাদের পুরো দিন রান্নাঘরে কাটানো উচিত নয়। এরপর ইফতার শেষ হওয়ার পর তাদের সাথে অতিরিক্ত আলাপচারিতায় মগ্ন থাকা এবং এর কারণে মসজিদে তারাবির নামাজ মিস করার বিষয় সমূহ জায়েয বিষয়ে বাড়াবাড়ির আওতায় আসে। ইবাদতের প্রতি সংযম এবং মনোযোগ সবসময় বজায় রাখতে হবে। যেকোন অবশিষ্ট খাবার পরবর্তীতে খাওয়ার জন্য ফ্রিজে রাখা উচিত বা অভাবী বা ক্ষুধার্ত লোকদের দেওয়া উচিত। এটি কখনই আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেওয়া উচিত নয় বা পচতে দেওয়া উচিত নয়।
ইফতারের সময় আমাদের অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। আমাদের প্লেটগুলিকে অতিরিক্ত খাবার দিয়ে স্তূপ করা উচিত নয়, যা পরে ফেলে দিতে হবে বা আবর্জনার মধ্যে চলে যাবে। আমাদের কখনই এক টুকরো খাবারও নষ্ট করা উচিত নয়।
রামাদান মাসে আমরা যে খাবার গ্রহণ করি তা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে স্বাদের চেয়ে উচ্চ পুষ্টির খাবার গ্রহণের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ভাজা খাবার এবং উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার একেবারে কম খাওয়া উচিত। সবচেয়ে ভাল হয় যদি তা পুরোপুরি এড়ানো যায়।
সামগ্রিক বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
লেখিকা : সাদাফ ফারুকী
সাদাফ ফারুকী পাকিস্তানের করাচিতে বসবাসকারী একজন লেখিকা এবং ব্লগার। তিনি ৩০০ টিরও বেশি মূল প্রবন্ধ লিখেছেন, যার বেশিরভাগই তাঁর ব্লগ সাদাফ'স স্পেস এ প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি সম্প্রতি তার অতীতের নিবন্ধগুলিকে নন-ফিকশন ইসলামিক বই হিসাবে প্রকাশ করা শুরু করেছেন, যা অ্যামাজন এবং কিন্ডলে পাওয়া যায়।
সূত্র : এ্যাবাউট ইসলাম
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: