স্ত্রীর নামের শেষে স্বামীর শেষ নাম যুক্ত করা কি হারাম?
শেখ আহমদ কুট্টি
Published: 2024-01-13 23:03:07 BdST | Updated: 2024-04-29 01:35:49 BdST
প্রশ্ন :
একজন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেছেন : আমি একজন নতুন ইসলাম গ্রহণকারী এবং আলহামদুলিল্লাহ আমি একজন মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছি। আমরা যুক্তরাজ্যে আমাদের বিবাহ নিবন্ধন করতে চাই। ইসলামিক আইন অনুসারে, আমার স্ত্রীকে তার উপাধি পরিবর্তন করে আমার উপাধি যুক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয় না, যা আমি হারাম বলে জানি। কিন্তু সে তার পরিবারের নাম এবং আমার উপাধি দিয়ে নিবন্ধন করতে আগ্রহী। এটি কি অনুমোদিত? কারণ এখাতে তার পরিবারের নাম বাদ পড়ছে না। নাকি এটিও হারামের মধ্যে পড়ে?
উত্তর :
পরম করুণাময়, পরম দয়াময় মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর রাসূলের প্রতি শান্তি ও বরকত বর্ষিত হোক। এই বিষয়ে ফতোয়া হচ্ছে : আইনগত কারণে প্রয়োজন হলে স্ত্রী তার স্বামীর উপাধি নিতে পারেন। এটি মিথ্যা বংশ দাবি করার মতো বিষয় নয়। আর মিথ্যা বংশ দাবী করা হারাম।
অত্র প্রশ্নের জবাবে শেখ আহমদ কুট্টি বলেছেন, ইসলাম ততক্ষণ পর্যন্ত প্রথা এবং সামাজিক আচরনকে বৈধ হিসাবে বিবেচনা করে যতক্ষণ না সেসব শরীয়তের স্পষ্ট বাধ্যবাধকতার বিরোধী না হয়। আমাদের আলেমগণ ইতিমধ্যেই নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন যে সময় অনুযায়ী ফতোয়া পরিবর্তিত হয়। একজন স্ত্রী তার স্বামীর পারিবারিক নাম গ্রহণ করার সংস্কৃতিতে যে প্রথাটি প্রচলিত আছে তা নিষিদ্ধের শ্রেণীতে পড়ে না। ইসলামের এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে কেউ যদি কাউকে মিথ্যা পিতামাতা দাবি করে। অপর দিকে স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে এই সংস্কৃতিতে কেউ কখনও পিতামাতার মিথ্যা বৈশিষ্ট্য হিসাবে এই ধরনের পরিবর্তনের কথা ভাবেন না।
মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা অধিক ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান তাহলে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই অথবা বন্ধু। এ ব্যাপারে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, কিন্তু তোমাদের অন্তরে অন্যায় সংকল্প থাকলে তা অপরাধ। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল-আহজাব ৩৩:৫)
বিশিষ্ট আলেম ও মুফাসসির ইবনে আশুর এই কথাটি ব্যাখ্যা করেছেন: "এই আয়াতটি সেই সময়ে প্রচলিত দত্তক গ্রহণের প্রথাকে বাতিল করে দেয় যেখানে দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতারা দত্তক নেওয়া সন্তানকে তাদের সন্তান বলে দাবি করার কারণে একটি মিথ্যা বংশের প্রচলন করত।" এই ভুল প্রথা সংশোধনের জন্য আয়াতটি নাযিল হয়। এটি প্রতিষ্ঠিত যে দত্তক গ্রহণ জৈবিক বংশের বাস্তবতা পরিবর্তন করে না। বিষয়টি স্বামীর পারিবারিক নাম গ্রহণকারী স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ এটি বংশ পরিবর্তনের মিথ্যা দাবি নয়; এটি কেবল একটি অধিভুক্তি। আমাদের কাছে নজির রয়েছে যেখানে ইসলামে গ্রহণযোগ্য বংশের পরিবর্তনের বিপরীতে অধিভুক্তি দেখায়। উদাহরণ স্বরূপ কোন ব্যক্তি বা বংশের সাথে সংযুক্তি। আরবদের মধ্যে একটি সাধারণ রীতি ছিল; ইসলামে তা অব্যাহত ছিল। এই প্রথা অনুসারে, একজন হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে তার ওস্তাদের বংশের নাম গ্রহণ করা সাধারণ বিষয় ছিল।
আরেকটি উদাহরণ হল কুনিয়া গ্রহণের রীতি। মহানবী (সা.) এর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা (রা.) এর কুনিয়া ছিল উম্মে আবদুল্লাহ। তাঁর কোন পুত্র বা কন্যা ছিল না; আবদুল্লাহ ছিলেন তার ভাতিজা। তবুও রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে উম্মে আবদুল্লাহ বলে ডাকতেন। আয়েশা (রা.) আবদুল্লাহর মা হওয়ার মিথ্যা দাবি করেছেন এমন ভেবে কেউ ভুল করেনি।
আরেকটি উদাহরণ হল রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বক্তব্য যাতে তিনি উম্মে আয়মান বা তাঁর পালক মায়ের বিষয়ে বলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার মায়ের পরে তিনি আমার মা। কিন্তু কোনো অর্থেই তিনি এটা বোঝাতে চাননি যে উম্মে আয়মান সত্যিকারে তাঁর জন্মদাত্রী।
উপরের বিশ্লেষন আলোকে, আপনার স্ত্রীর জন্য তার নিজের নামের সাথে আপনার পরিবারিক নাম বা পদবী যুক্ত করা আপত্তিজনক নয়। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের কথা ও কাজে বিচক্ষণতা ও ন্যায়পরায়ণতা দান করেন। সামগ্রিক বিষয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহই ভালো জানেন।
উত্তর প্রদান কারী : শেখ আহমদ কুট্টি
শেখ আহমদ কুট্টি একজন সিনিয়র লেকচারার এবং অন্টারিও, কানাডার ইসলামিক ইনস্টিটিউট অফ টরন্টোর একজন ইসলামিক স্কলার।
সূত্র : এ্যাবাউট ইসলাম
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: