পিতা-মাতার সাথে যেরকম ব্যবহার করবেন
ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2021-08-28 20:47:20 BdST | Updated: 2024-05-15 03:47:18 BdST
আমাদের বেড়ে ওঠার পেছনে আমাদের বাবা ও মায়ের যথেষ্ট পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার রয়েছে। আমাদের বর্তমান অবস্থানের পিছনে তাদের অবদানকে আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারবোনা।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের জীবনে পিতা মাতার এই অপরিসীম গুরুত্বের কথা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই এবং তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্বকে আমরা অনেকসময় অবহেলায় পাশ কাটিয়ে যাই।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে এখানে পিতা মাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং আমাদের উপর তাদের অধিকার সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হল।
১. তাওহীদে বিশ্বাসের পর দ্বিতীয় দায়িত্ব
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর।… (সূরা ইসরা, আয়াত: ২৩)
২. পিতা মাতাকে আঘাত না করা
…তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্ঠাচারের সাথে কথা বল। (সূরা ইসরা, আয়াত: ২৩)
৩. তাদের অবদানকে স্বীকার করা
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা ইসরা, আয়াত: ২৪)
৪. অমুসলিম পিতা মাতার প্রতি সদাচরণ
পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৫)
৫. মায়ের বিশেষ মর্যাদা
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত,
একবার এক লোক রাসূল (সা.) এর কাছে এসে প্রশ্ন করে, “হে আল্লাহর রাসূল, আমার নিকটজনদের মধ্যে কে আমার সর্বাধিক সদাচার ও মনোযোগ পাওয়ার অধিকারী?” রাসূল (সা.) উত্তরে বলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, “এরপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) আবার উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করলো, “এরপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার পিতা।” (বুখারী ও মুসলিম)
৬. পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন জিহাদের সমমানের পূণ্য
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক লোক এসে রাসূল (সা.) এর কাছে তার সাথে জিহাদে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থণা করলো। রাসূল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি পিতা মাতা জীবিত আছেন?” লোকটি উত্তর দিল, “হ্যা।” রাসূল (সা.) তখন তাকে বললেন, “যাও, তাদের সেবা ও যত্ন করার মধ্য দিয়ে জিহাদ কর।” (মুসলিম)
৭. পিতা মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের দায়িত্ব
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যখন কোন ব্যক্তি ইন্তেকাল করে, তখন তার আমল করার আর সব পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি পথ বাদে, প্রথমত তার এমন সাদাকাহ যার মাধ্যমে সমাজ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়, দ্বিতীয়ত জ্ঞানের ক্ষেত্রে তার এমন অবদান যা ক্রমাগতভাবে মানুষের উপকারে আসে এবং তৃতীয়ত এমন সৎ সন্তান যারা তার জন্য দোয়া করে।” (মুসলিম)
৮. ধ্বংস হওয়া থেকে দূরে থাকুন
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) একবার বলতে থাকেন,
“সে ধ্বংস হল, সে ধ্বংস হল, সে ধ্বংস হল।”
উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, “হে আল্লাহর রাসূল, সে কে?”
রাসূল (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি যার পিতা মাতা উভয়েই বা তাদের একজন তার জীবনকালে বার্ধক্যে পৌছল কিন্তু সে (তাদের সেবার মাধ্যমে) জান্নাতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হল।” (মুসলিম)
৯. পিতা মাতার অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা
হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমি কি তোমাদের জানাবো না সর্বাধিক গুরুতর গুনাহের কাজ কি?” সকলেই জানালো, “অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল।” রাসূল (সা.) বলেন, “আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া।” (বুখারী)
আল্লাহ আমাদের উক্ত আয়াত ও হাদীসের আলোকে পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জান্নাত অর্জনের সুযোগ দান করুন।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: