গোপনীয়তা সম্পর্কে ইসলামের চারটি বিধি-নিষেধ
মূল: তাবাসসুম; অনুবাদ: তাহারাতুন তাইয়্যেবা
Published: 2020-10-13 23:55:17 BdST | Updated: 2024-05-14 13:58:23 BdST
‘মা, আপনি কেন আমার ঘরে ঢোকার আগে দরজায় নক করেন না?’
এই প্রশ্নটি অনেক পুরনোই বলা যায়, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের বড়রা বিশেষ করে মা-বাবা তাদের সন্তানদের গোপনীয়তা রক্ষার্থে খুব একটা গুরুত্ব দেখান না। অনেক ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। সন্তানরা প্রায়শই বুঝে উঠতে পারে না যে তাদের পিতামাতারও গোপনীয়তা প্রয়োজন এবং বিনা অনুমতিতে তাদের ঘরে প্রবেশের সময় তারা দু'বার এ সম্পর্কে ভাবেও না।
তাদের কাছে এই কাজগুলো তেমন গুরুতর বলে বিবেচিত হয় না। কিন্তু আমাদেরকে তাদের ভুলগুলো শুধরে দেওয়া উচিত এবং তাদেরকে বোঝানো উচিত আল্লাহ তা’আলা এর জন্য কতটুকু সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
এবার ইসলামের আঙ্গিকে এ নিয়ে কিছু কথা বলা যাক-
১. ছোটরা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের রুমে প্রবেশের পূর্বে দিনের তিন সময়ে অনুমতি চাইবে
“হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে- ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা পোশাক খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।“
(কুরআন ২৪:৫৮)
২. আমাদের কখনোই অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়, তার অনুমতি পেতে যত সময়ই লাগুক না কেন!
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।“
(কুরআন ২৪:২৭)
৩. যদি কারও দরজায় আঘাত করে তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও সে সাড়া না দেয় তাহলে ফিরে যাওয়া উচিত
আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবু মুসা উমর (রাঃ) এর কক্ষে প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তিনি কোনো অনুমতি পাননি। উমর (রাঃ) তাকে পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি ফিরে গেলে কেন?
তিনি তখন উত্তর দিলেন,
‘আমি আপনার নিকট প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চেয়েছিলাম যেমনটা আমাদের রাসুল (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছিলেন, কিন্তু আপনি কোনো অনুমতি দেননি, তাই আমি প্রবেশ করিনি।‘
তিনি বললেন, ‘তোমাকে এর প্রমাণ নিয়ে আসতে হবে অন্যথায়...!'
অতঃপর তিনি তার সম্প্রদায়ের সামনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে সত্যি কথা বলতে বললেন, অতঃপর তারা তা করলো এবং তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন।
(ইবনে মাজাহ)
৪. কখনোই কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা উচিত নয়- হোক সে আমাদের স্বামী/স্ত্রী, ভাই,বোন বা অন্য কেউ। কারও উপর এ নিয়ে গুপ্তচরবৃত্তিও ঠিক নয়
“মুমিনগণ, তোমরা ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।“
(কুরআন ৪৯ঃ১২)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“সন্দেহ এড়িয়ে চলো, কারণ সন্দেহ পোষণ করলে একে অপরের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হবে। কখনোই একে অপরের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে না, গুপ্তচরবৃত্তি করবে না, কারও উপর শত্রুতা পোষণ করবে না। আল্লাহর বান্দা হিসেবে সকলের সাথে ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখো।“
(সহীহ মুসলিম)
যখন আমাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়, তখন আমরা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠি। তাই কুরআনের এ আয়াত এবং হাদীসগুলো অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে আমরা অন্যদের সচেতন করতে পারি এবং নিজেরা তদানুযায়ী আমল করতে পারি।
তাবাসসুম সম্পর্কে
তাবাসসুম একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার এবং যুক্তরাজ্যের আল-সালাম ইন্সটিটিউটের একজন অনলাইন আলিমাহ শিক্ষার্থী।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: